ঢাকা ১২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

তিতুমীর ক্যাম্পাসে জুম্মার নামাজ যেন শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা

ছবি : সংগৃহীত

নাঈম তালুকদার,সরকারি তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধিঃ

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শুধু জ্ঞানার্জনের কেন্দ্র নয়, এটি এক জীবন্ত পরিবার। আর এই পরিবারের সদস্যদের মেলবন্ধনের এক অনন্য ক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলেজের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মসজিদটি। প্রতি শুক্রবার জোহরের ওয়াক্তে এখানে অনুষ্ঠিত হয় জুমার জামাত, যা কেবল একটি নামাজ আদায় নয়, বরং ছাত্র-শিক্ষক, প্রাক্তন-বর্তমান এবং নবীন-প্রবীণদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।

জুমার দিন সকাল থেকেই অন্যরকম এক আমেজ বিরাজ করে কলেজ ক্যাম্পাসে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে মসজিদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পরিচিত মুখদের সাথে কুশল বিনিময়, হাসি-ঠাট্টার মধ্য দিয়ে এক হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নামাজের পূর্বে বয়ান চলাকালে মনোযোগের সাথে ধর্মীয় আলোচনা শোনে সকলে। এই সময়টাতে নবীন শিক্ষার্থীরা যেমন তাদের সিনিয়র ভাইদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়, তেমনি প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও ফিরে আসেন তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে, খুঁজে নেন ফেলে আসা সোনালী দিনের স্মৃতি।

নামাজ শুরু হওয়ার আগে কাতারে শামিল হন বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই, নেই কোনো উঁচু-নিচুর পার্থক্য। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ান মহান আল্লাহর দরবারে। এই দৃশ্য যেন এক অসাধারণ ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতিচ্ছবি। নামাজ শেষে মোনাজাতের সময় সকলের সম্মিলিত কণ্ঠে উচ্চারিত আমিন ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।

নামাজ শেষে মসজিদ প্রাঙ্গণে এক অনানুষ্ঠানিক মিলনমেলা বসে। দীর্ঘ দিন পর দেখা হওয়া বন্ধুদের আলিঙ্গন, শিক্ষকের সাথে ছাত্রের শ্রদ্ধাপূর্ণ আলোচনা কিংবা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ – এই মুহূর্তগুলো ক্যাম্পাসের চিরন্তন চিত্র। অনেকেই একসাথে দুপুরের খাবার খান মসজিদের আশেপাশে, চলতে থাকে আড্ডা আর গল্প। এই জুমার জামাত যেন শুধু একটি ধর্মীয় কর্তব্য পালন নয়, বরং এটি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন তৈরি করে।


প্রবীণ শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে নবীনদের জন্য তুলে ধরেন মূল্যবান সব কথা। তেমনি নবীনরাও তাদের উদ্যম আর নতুনত্বের বার্তা নিয়ে আসে প্রবীণদের মাঝে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মজীবনের নানা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন, যা বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। এই আন্তঃপ্রজন্মের সংযোগ তিতুমীর কলেজকে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করে।

তিতুমীর কলেজ মসজিদের জুমার জামাত কেবল একটি ঐতিহ্য নয়, এটি এখানকার শিক্ষার্থীদের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ধর্মীয় অনুশাসনের পাশাপাশি এটি সামাজিক সম্প্রীতি, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। প্রতি শুক্রবার এই মিলনমেলা যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, যা তিতুমীর কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে গেঁথে থাকে এক অমলিন স্মৃতি হিসেবে। এই প্রাঙ্গণ ধর্ম আর ভালোবাসার এক অপূর্ব সঙ্গমস্থল , যেখানে প্রতিটি শুক্রবার রচিত হয় এক নতুন ভ্রাতৃত্বের ইতিহাস।

এমএস

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

যেসব খাবারে মিটবে আয়রনের ঘাটতি

তিতুমীর ক্যাম্পাসে জুম্মার নামাজ যেন শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা

আপডেট সময় : ০৮:৩৩:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

নাঈম তালুকদার,সরকারি তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধিঃ

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শুধু জ্ঞানার্জনের কেন্দ্র নয়, এটি এক জীবন্ত পরিবার। আর এই পরিবারের সদস্যদের মেলবন্ধনের এক অনন্য ক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলেজের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মসজিদটি। প্রতি শুক্রবার জোহরের ওয়াক্তে এখানে অনুষ্ঠিত হয় জুমার জামাত, যা কেবল একটি নামাজ আদায় নয়, বরং ছাত্র-শিক্ষক, প্রাক্তন-বর্তমান এবং নবীন-প্রবীণদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।

জুমার দিন সকাল থেকেই অন্যরকম এক আমেজ বিরাজ করে কলেজ ক্যাম্পাসে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে মসজিদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পরিচিত মুখদের সাথে কুশল বিনিময়, হাসি-ঠাট্টার মধ্য দিয়ে এক হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নামাজের পূর্বে বয়ান চলাকালে মনোযোগের সাথে ধর্মীয় আলোচনা শোনে সকলে। এই সময়টাতে নবীন শিক্ষার্থীরা যেমন তাদের সিনিয়র ভাইদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়, তেমনি প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও ফিরে আসেন তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে, খুঁজে নেন ফেলে আসা সোনালী দিনের স্মৃতি।

নামাজ শুরু হওয়ার আগে কাতারে শামিল হন বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই, নেই কোনো উঁচু-নিচুর পার্থক্য। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ান মহান আল্লাহর দরবারে। এই দৃশ্য যেন এক অসাধারণ ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতিচ্ছবি। নামাজ শেষে মোনাজাতের সময় সকলের সম্মিলিত কণ্ঠে উচ্চারিত আমিন ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।

নামাজ শেষে মসজিদ প্রাঙ্গণে এক অনানুষ্ঠানিক মিলনমেলা বসে। দীর্ঘ দিন পর দেখা হওয়া বন্ধুদের আলিঙ্গন, শিক্ষকের সাথে ছাত্রের শ্রদ্ধাপূর্ণ আলোচনা কিংবা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ – এই মুহূর্তগুলো ক্যাম্পাসের চিরন্তন চিত্র। অনেকেই একসাথে দুপুরের খাবার খান মসজিদের আশেপাশে, চলতে থাকে আড্ডা আর গল্প। এই জুমার জামাত যেন শুধু একটি ধর্মীয় কর্তব্য পালন নয়, বরং এটি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন তৈরি করে।


প্রবীণ শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে নবীনদের জন্য তুলে ধরেন মূল্যবান সব কথা। তেমনি নবীনরাও তাদের উদ্যম আর নতুনত্বের বার্তা নিয়ে আসে প্রবীণদের মাঝে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মজীবনের নানা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন, যা বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। এই আন্তঃপ্রজন্মের সংযোগ তিতুমীর কলেজকে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করে।

তিতুমীর কলেজ মসজিদের জুমার জামাত কেবল একটি ঐতিহ্য নয়, এটি এখানকার শিক্ষার্থীদের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ধর্মীয় অনুশাসনের পাশাপাশি এটি সামাজিক সম্প্রীতি, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। প্রতি শুক্রবার এই মিলনমেলা যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, যা তিতুমীর কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে গেঁথে থাকে এক অমলিন স্মৃতি হিসেবে। এই প্রাঙ্গণ ধর্ম আর ভালোবাসার এক অপূর্ব সঙ্গমস্থল , যেখানে প্রতিটি শুক্রবার রচিত হয় এক নতুন ভ্রাতৃত্বের ইতিহাস।

এমএস