ঢাকা ০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইছাআবা ঢাবি শাখা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আড়ংয়ে চাকরির নিয়োগ, এইচএসসি পাশেই আবেদন ‘আমি তো বলিনি সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায়’: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তিতুমীর কলেজে বর্ষবরণে রাজনৈতিক রঙ, শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জয়পুরহাট পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপি ছাত্র নেতাকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা, আহত ৪ জন, আটক ১ নাটোরের নলডাঙ্গায় ফিলিস্তিনে ইজরায়েল হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে মুদি দোকানি কে হত্যা জানা গেল ফাজিল অনার্স পরীক্ষা শুরুর তারিখ বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদটা দরকার ছিল: মেলিন্ডা গেটস

গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা ছবি : সংগৃহীত

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার জন্য অপর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা প্রবাহ ও ইসরাইলের চলমান কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ এবং বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বুধবার ৮০১টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইল এখনো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের প্রবাহ কঠোরভাবে সীমিত করছে। যা হামাসের সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতির চুক্তির সুস্পট লঙ্ঘন।

জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এখনো জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়ে গেছে।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো গাজার জনগণের জন্য পানি, খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, শীতের পোশাক এবং অন্যান্য সাহায্য বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পশ্চিম তীরে ইসরাইলি অভিযান ও মানবিক সংকট

এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর চলমান অভিযানে ফিলিস্তিনি নাগরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে বলে জানিয়েছে ওসিএইচএ।

অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনারডব্লিউএ (UNRWA) জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দুই সপ্তাহে তারা গাজার ১২ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে পেরেছে। এছাড়াও তারা উত্তর গাজায় ৩৭টি নতুন আশ্রয় কেন্দ্র চালু করেছে এবং সেখানে তাঁবু, কম্বল ও শীতের পোশাক সরবরাহ করা হয়েছে।

ত্রাণের ঘাটতি নিয়ে সতর্কতা

এদিকে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) বলেছে, বর্তমান সহায়তা প্রবাহ গাজার জনগণের চাহিদা মেটাতে সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত।

এ বিষয়ে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি টম ফ্লেচার ‍আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘গাজায় ধ্বংস এবং দুর্ভোগের মাত্রা কল্পনার বাইরে’।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা

এ অবস্থায় উপত্যকাটিতে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কারণ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের শনিবারের মধ্যে মুক্তি না দিলে গাজায় নতুন করে বোমা হামলা শুরু হবে।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সতর্ক করে বলেন, ‘হামাস শনিবারের মধ্যে সব বন্দি মুক্ত না করলে সেখানে নরক নেমে আসবে’।

এমন প্রেক্ষপটে হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা বুধবার জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারির জন্য নির্ধারিত বন্দি বিনিময় সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। কারণ ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। যার মধ্যে- ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো, ট্যাঙ্কের অনুপ্রবেশ এবং জরুরি চিকিৎসা ও ভারি সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা অন্তর্ভুক্ত।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা

এরই মধ্যে মিশরীয় সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা আল-ইখবারিয়া বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব কমাতে কিছু অগ্রগতি করেছে এবং যুদ্ধবিরতি চালিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে।

এর কিছুক্ষণ পরেই হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে পরিকল্পনা অনুযায়ীই শনিবার ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি মানছে না— এমন অভিযোগে জিম্মিদের মুক্তি দিতে নারাজ ছিল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি। তবে বৃহস্পতিবার বিকালে সেই অবস্থান থেকে ফিরে এসেছে তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, শনিবার ইসরাইলি তিন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। হামাস গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করতে চায় না।

হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা খলিল আল-হাইয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য কায়রোতে পৌঁছানোর একদিন পর এই বিবৃতি এলো।

হামাস বলছে, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণ প্রবাহ অব্যাহত রাখতে বাধা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সূত্র: আল-মায়াদিন

কেকে

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

কুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইছাআবা ঢাবি শাখা

গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

আপডেট সময় : ১০:০৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার জন্য অপর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা প্রবাহ ও ইসরাইলের চলমান কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ এবং বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বুধবার ৮০১টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইল এখনো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের প্রবাহ কঠোরভাবে সীমিত করছে। যা হামাসের সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতির চুক্তির সুস্পট লঙ্ঘন।

জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এখনো জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়ে গেছে।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো গাজার জনগণের জন্য পানি, খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, শীতের পোশাক এবং অন্যান্য সাহায্য বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পশ্চিম তীরে ইসরাইলি অভিযান ও মানবিক সংকট

এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর চলমান অভিযানে ফিলিস্তিনি নাগরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে বলে জানিয়েছে ওসিএইচএ।

অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনারডব্লিউএ (UNRWA) জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দুই সপ্তাহে তারা গাজার ১২ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে পেরেছে। এছাড়াও তারা উত্তর গাজায় ৩৭টি নতুন আশ্রয় কেন্দ্র চালু করেছে এবং সেখানে তাঁবু, কম্বল ও শীতের পোশাক সরবরাহ করা হয়েছে।

ত্রাণের ঘাটতি নিয়ে সতর্কতা

এদিকে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) বলেছে, বর্তমান সহায়তা প্রবাহ গাজার জনগণের চাহিদা মেটাতে সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত।

এ বিষয়ে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি টম ফ্লেচার ‍আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘গাজায় ধ্বংস এবং দুর্ভোগের মাত্রা কল্পনার বাইরে’।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা

এ অবস্থায় উপত্যকাটিতে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কারণ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের শনিবারের মধ্যে মুক্তি না দিলে গাজায় নতুন করে বোমা হামলা শুরু হবে।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সতর্ক করে বলেন, ‘হামাস শনিবারের মধ্যে সব বন্দি মুক্ত না করলে সেখানে নরক নেমে আসবে’।

এমন প্রেক্ষপটে হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা বুধবার জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারির জন্য নির্ধারিত বন্দি বিনিময় সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। কারণ ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। যার মধ্যে- ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো, ট্যাঙ্কের অনুপ্রবেশ এবং জরুরি চিকিৎসা ও ভারি সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা অন্তর্ভুক্ত।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা

এরই মধ্যে মিশরীয় সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা আল-ইখবারিয়া বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব কমাতে কিছু অগ্রগতি করেছে এবং যুদ্ধবিরতি চালিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে।

এর কিছুক্ষণ পরেই হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে পরিকল্পনা অনুযায়ীই শনিবার ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি মানছে না— এমন অভিযোগে জিম্মিদের মুক্তি দিতে নারাজ ছিল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি। তবে বৃহস্পতিবার বিকালে সেই অবস্থান থেকে ফিরে এসেছে তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, শনিবার ইসরাইলি তিন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। হামাস গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করতে চায় না।

হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা খলিল আল-হাইয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য কায়রোতে পৌঁছানোর একদিন পর এই বিবৃতি এলো।

হামাস বলছে, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণ প্রবাহ অব্যাহত রাখতে বাধা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সূত্র: আল-মায়াদিন

কেকে