ঢাকা ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলামি আইনে ধর্ষণকারীর শাস্তি কী?

ছবি : সংগৃহীত

ইসলামে ব্যাভিচারী এবং ধর্ষণকারীকে জনসম্মুখে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আর এর শাস্তি হলো ১০০ বেত্রাঘাত অথবা পাথর মেরে হত্যা করা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তাদের শাস্তি দিতে যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয় এবং মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’

কোরআন বা হাদিসে ধর্ষণকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। বরং বিবাহবহির্ভূত যে কোনো যৌন সম্পর্কই ইসলামে অপরাধ হিসেবে গণ্য। ফলে ব্যাভিচারী ও ধর্ষক উভয়ের জন্যই কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করেছে ইসলাম।

ইসলামী আইনশাস্ত্র মোতাবেক ধর্ষকের শাস্তি ব্যাভিচারকারীর শাস্তির অনুরূপ। তবে অনেক ইসলামী স্কলার ধর্ষণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছু শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। ধর্ষণের শাস্তির ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিষয়টির স্পর্শকাতরতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এক হাদিসে আছে, রাসুল (সা.)-এর যুগে এক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে হজরত (সা.) ওই নারীকে কোনোরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষককে হত্যার শাস্তি দেন। অর্থাৎ ব্যাভিচারকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড না হলেও ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

শিরক ও হত্যার পর ব্যাভিচার বা ধর্ষণ সুস্পষ্ট হারাম ও বড় ধরনের অপরাধ। এজন্য ইসলামে ব্যাভিচার ও ধর্ষণের কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তবে এখানে শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। নিজের স্বামী/স্ত্রী থাকাবস্থায় যদি কেউ ব্যাভিচারী হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ইসলামের বিধান। আর যদি ব্যাভিচারী (নারী-পুরুষ) অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশটি বেত্রাঘাত করা হবে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘ব্যাভিচারিণী নারী, ব্যাভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে একশ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ২)

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘অবিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশ বেত্রাঘাত ও রজম (পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড)। ’ (সহিহ মুসলিম)

ইসলামে ধর্ষণের শাস্তির স্বরূপ

ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষে ব্যাভিচার সংগঠিত হয়। আর অন্যপক্ষ হয় নির্যাতিত। তাই নির্যাতিতের কোনো শাস্তি নেই। কেবল অত্যাচারী ধর্ষকের শাস্তি হবে। ধর্ষণকারী একসঙ্গে দুটো অপরাধ সংঘঠিত করে। এক. ব্যাভিচার। দুই. অন্যের শারীরিক এবং সামাজিক মর্যাদার ক্ষতি। এক্ষেত্রে প্রথমটির জন্য পূর্বোক্ত ব্যভিচারের শাস্তি বরাদ্দ। আর যেহেতু একই সঙ্গে দ্বিতীয় আরেকটি অপরাধ সংঘটিত হলো এজন্য হয়তো রাসুল (সা.) ধর্ষণকারীকে হত্যার শাস্তি দিয়েছেন।

ধর্ষণ বা ব্যাভিচারকারীকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে যাতে মানুষ এই শাস্তি স্বচক্ষে দেখতে পায়। প্রকাশ্য শাস্তি দেখলে মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকবে এবং এ ধরনের কাজ থেকে নিজেকে নিবৃত রাখতে সচেষ্ট থাকবে।

বাংলাদেশে সম্প্রতি বহু ধর্ষণের ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে এবং কিছু কিছু ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ধর্ষণ এখন সামাজিক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই সামাজিক ব্যাধি রোধ করতে ইসলামী আইনে প্রকাশ্যে শাস্তির বিধান চালু করা জরুরি।

কেকে

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসলামি আইনে ধর্ষণকারীর শাস্তি কী?

আপডেট সময় : ০৮:৫১:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

ইসলামে ব্যাভিচারী এবং ধর্ষণকারীকে জনসম্মুখে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আর এর শাস্তি হলো ১০০ বেত্রাঘাত অথবা পাথর মেরে হত্যা করা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তাদের শাস্তি দিতে যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয় এবং মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’

কোরআন বা হাদিসে ধর্ষণকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। বরং বিবাহবহির্ভূত যে কোনো যৌন সম্পর্কই ইসলামে অপরাধ হিসেবে গণ্য। ফলে ব্যাভিচারী ও ধর্ষক উভয়ের জন্যই কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করেছে ইসলাম।

ইসলামী আইনশাস্ত্র মোতাবেক ধর্ষকের শাস্তি ব্যাভিচারকারীর শাস্তির অনুরূপ। তবে অনেক ইসলামী স্কলার ধর্ষণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছু শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। ধর্ষণের শাস্তির ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিষয়টির স্পর্শকাতরতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

এক হাদিসে আছে, রাসুল (সা.)-এর যুগে এক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে হজরত (সা.) ওই নারীকে কোনোরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষককে হত্যার শাস্তি দেন। অর্থাৎ ব্যাভিচারকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড না হলেও ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

শিরক ও হত্যার পর ব্যাভিচার বা ধর্ষণ সুস্পষ্ট হারাম ও বড় ধরনের অপরাধ। এজন্য ইসলামে ব্যাভিচার ও ধর্ষণের কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তবে এখানে শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। নিজের স্বামী/স্ত্রী থাকাবস্থায় যদি কেউ ব্যাভিচারী হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ইসলামের বিধান। আর যদি ব্যাভিচারী (নারী-পুরুষ) অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে একশটি বেত্রাঘাত করা হবে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘ব্যাভিচারিণী নারী, ব্যাভিচারী পুরুষ, তাদের প্রত্যেককে একশ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর করণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ২)

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘অবিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশ বেত্রাঘাত ও রজম (পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড)। ’ (সহিহ মুসলিম)

ইসলামে ধর্ষণের শাস্তির স্বরূপ

ধর্ষণের ক্ষেত্রে একপক্ষে ব্যাভিচার সংগঠিত হয়। আর অন্যপক্ষ হয় নির্যাতিত। তাই নির্যাতিতের কোনো শাস্তি নেই। কেবল অত্যাচারী ধর্ষকের শাস্তি হবে। ধর্ষণকারী একসঙ্গে দুটো অপরাধ সংঘঠিত করে। এক. ব্যাভিচার। দুই. অন্যের শারীরিক এবং সামাজিক মর্যাদার ক্ষতি। এক্ষেত্রে প্রথমটির জন্য পূর্বোক্ত ব্যভিচারের শাস্তি বরাদ্দ। আর যেহেতু একই সঙ্গে দ্বিতীয় আরেকটি অপরাধ সংঘটিত হলো এজন্য হয়তো রাসুল (সা.) ধর্ষণকারীকে হত্যার শাস্তি দিয়েছেন।

ধর্ষণ বা ব্যাভিচারকারীকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে যাতে মানুষ এই শাস্তি স্বচক্ষে দেখতে পায়। প্রকাশ্য শাস্তি দেখলে মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকবে এবং এ ধরনের কাজ থেকে নিজেকে নিবৃত রাখতে সচেষ্ট থাকবে।

বাংলাদেশে সম্প্রতি বহু ধর্ষণের ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে এবং কিছু কিছু ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ধর্ষণ এখন সামাজিক ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই সামাজিক ব্যাধি রোধ করতে ইসলামী আইনে প্রকাশ্যে শাস্তির বিধান চালু করা জরুরি।

কেকে