“নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্য পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ” শীর্ষক ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্পের আওতায় শরীয়তপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোল টেবিল বৈঠক।
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫—শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এসডিএস)-এর কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ বৈঠকে জেলার মৎস্য খাত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা, গবেষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিকরা অংশ নেন।
সভাপতিত্ব করেন এসডিএস-এর পরিচালক মুজিবুর রহমান মাদবর।
আয়োজনে ছিল এসডিএস, সহযোগিতায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), এবং অর্থায়নে ইফাদ ও ডেনমার্ক দূতাবাস।
আলোচনার মূল বিষয়গুলো:
বিদ্যুৎ বিল কৃষি হারে নির্ধারণের দাবি
উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, মাছচাষের বিদ্যুৎ বিল শিল্প খাতের হিসেবে আদায় করা হচ্ছে, যা অযৌক্তিক ও ব্যয়বহুল। কৃষি হারে বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণের জন্য জোর দাবি ওঠে।
রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজীকরণ
জটিলতা ও সময়ক্ষেপণ নিয়ে উদ্যোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই প্রক্রিয়া করলে বেশি উদ্যোক্তা বৈধভাবে যুক্ত হতে পারবেন।
হালদা মডেলের মতো পদ্মা উৎসের পোনা উৎপাদন
জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা পদ্মা নদীর দেশীয় মাছের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। হালদার আদলে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।
চায়না জালের অপব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ
অবৈধ জালের কারণে দেশীয় মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে—বক্তারা বলেন, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে হবে।
মধ্যস্বত্বভোগী দূর করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা
উৎপাদক যেন সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি করতে পারেন—এমন পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
প্রক্রিয়াজাতকরণ ও নিরাপদ খাদ্য
মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণকে শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করে মান নিয়ন্ত্রণে ল্যাব ও প্রশিক্ষণের প্রস্তাব আসে।
চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ
পুঁজি সংকট, প্রশিক্ষণের অভাব, বাজার সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ নিয়ে মুক্ত আলোচনা হয়। সহজ ঋণ ও প্রশিক্ষণ দাবি করেন উদ্যোক্তারা।
যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত
সব সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
বক্তাদের নির্বাচিত মতামত
মো. রফিকুল ইসলাম, সফল মাছচাষি বলেন:
“দালালরা আমাদের মাছ কিনে নিচ্ছে অর্ধেক দামে, আর বিক্রি করছে দ্বিগুণে। এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতেই হবে।”
ওয়াহিদ খান শাহিন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বলেন:
“এসডিএস একাডেমির সহায়তায় আমি মাছচাষে সফল হয়েছি। উদ্যোক্তাদের এই ধরনের সহায়তা দরকার।”
মো. আব্দুল্লাহ আল ইমরান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, ভেগরগঞ্জ:
“পদ্মার মাছের রেনু রক্ষণাবেক্ষণ করে চাষাবাদ করলে বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হবে। আমরা উদ্যোক্তাদের সহায়তায় প্রস্তুত।”
ফাতেমাতুজ জহুরা, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, সদর:
“নারীদেরও এই খাতে সম্পৃক্ত করতে হবে। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেব।”
রোকসানা বেগম, নারী উদ্যোক্তা:
“নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা কম, যা তাদের পিছিয়ে দিচ্ছে।”
আবুল কাশেম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা:
“চায়না জালের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, পাশাপাশি পদ্মা থেকে প্রাকৃতিক পোনা উৎপাদনের বিষয়েও আমরা কাজ করছি।”
উন্নয়নকর্মীদের মতামত:
“স্বচ্ছতা ও সরকারি সহায়তা ছাড়া এই খাত ঝুঁকির মুখে পড়বে।”
এমএস