যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীন সফরে যাচ্ছেন। চীনের তিয়ানজিন শহরে ৩১ আগস্ট শুরু হতে যাওয়া সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) সম্মেলনে অংশ নিতে এ সফরে যাচ্ছেন তিনি।
বুধবার (৬ আগস্ট) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায়। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
২০১৮ সালের জুনে শেষবার চীন সফর করেছিলেন মোদি। এরপর ২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। যদিও গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদির বৈঠকের মাধ্যমে উষ্ণতা কিছুটা ফিরে আসে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে উত্তেজনা
মোদির চীন সফরের পটভূমিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখলে আরও শাস্তির হুমকি দিয়েছেন।
ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা ও ব্রিকস জোটে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতির’ সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের কারণে ভারতসহ জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হতে পারে। ফলে ভারতের রপ্তানির ওপর মোট শুল্ক দাঁড়াতে পারে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত, এমনটাই বলছে নয়াদিল্লির একটি অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন রিপোর্ট।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ছিল প্রায় ৮১ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে ভারতের ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে রপ্তানির অংশ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সরাসরি প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব সীমিত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক তৎপরতা
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে রাশিয়া সফরে আছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তিনি রুশ তেল কেনা এবং প্রতিরক্ষা চুক্তি, বিশেষ করে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হস্তান্তর বিষয়ে আলোচনা করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
চলতি মাসেই পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করও রাশিয়া সফরে যেতে পারেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শীর্ষ কূটনৈতিক দূত স্টিভ উইটকফ রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চূড়ান্ত সময়সীমার আগে কোনো সমঝোতা না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
বাণিজ্য আলোচনায় অচলাবস্থা
রয়টার্স জানিয়েছে, রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত, সংকেত উপেক্ষা এবং পারস্পরিক আস্থার ঘাটতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা থেমে গেছে। ১৯০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য থাকা সত্ত্বেও চুক্তি হয়নি।
ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অবশ্য বুধবার তাদের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রেখে ৬.৫ শতাংশে ধরে রেখেছে এবং নতুন শুল্কের প্রভাব সত্ত্বেও সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে।
কেকে