বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস. আলমের ঋণ অনিয়মে দুর্বল হয়ে পড়া পাঁচটি ব্যাংককে প্রথম দফায় একীভূত (মার্জার) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে সরকার থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মার্জার প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ শেষ করার লক্ষ্যে সরকার শিগগিরই সময়সূচি ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান গভর্নর।
তিনি বলেন, ‘যেসব ব্যাংক একীভূত হবে, তাদের আমানত পুরোপুরি নিরাপদ। প্রত্যেকেই তার জমানো টাকা ফেরত পাবেন, কারণ সরকার এ প্রক্রিয়ায় বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা দেবে।’
গভর্নরের ভাষ্য, ‘একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে। সরকারের যে বিনিয়োগ এতে থাকবে, তা লাভজনক প্রমাণিত হবে এবং সরকার লাভসহ সেই অর্থ ফেরত পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিপুল অর্থে তাদের ব্যাংক ও বিমা খাতে বিনিয়োগ করেছিল। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো পরে লাভ করে বেসরকারি খাতে ফিরে গিয়েছিল। আমাদের দেশেও জনগণের স্বার্থে এ রকম পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।’
গভর্নর জানান, কিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করে তাদের উন্নতির জন্য প্রায় এক বছর সময় দেওয়া হয়েছিল। কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ালেও যারা পারেনি, তাদের এখন একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
“খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থা আমরা দীর্ঘদিন চলতে দিতে পারি না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করা,” বলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি জানান, সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথম দফায় কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করা হবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে আরও কিছু ব্যাংক মার্জারের আওতায় আনা হবে।
নতুন বিনিয়োগ না বাড়লে রপ্তানি বাজার টিকবে কীভাবে—এমন প্রশ্নে গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য হলো মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখা। গত বছরের এই সময়ে ডলার সংকটে আমদানি প্রায় বন্ধের পথে ছিল। এখন পর্যাপ্ত ডলার আছে এবং শিল্পখাতের কাঁচামাল আমদানিতে তা ব্যবহার হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প এখনও যথেষ্ট সক্ষম। তবে দেশের অর্থনীতিতে একটি অনিশ্চয়তা কাজ করছে, যা বিনিয়োগে বাধা দিচ্ছে। এজন্য আমরা ডলার বাজারে সহায়তা দিচ্ছি, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখছি।’
গভর্নর আশা প্রকাশ করেন, ‘নির্বাচনের পর বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে। ডলার সরবরাহ বাড়িয়ে ও বিনিময় বাজারে ভারসাম্য এনে আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে অস্থিরতা প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকের অভ্যন্তরে যেসব স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনো অনিয়ম দেখলেই আমরা তদন্ত শুরু করি। বাইরে থেকে চাপ থাকলেও আমরা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছি। এই ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘টাকা পাচারের প্রবণতা অনেকটাই কমে এসেছে। বিদেশে জব্দ করা অর্থ ফেরত আনতে হলে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। অনেক দেশেই এটি সময়সাপেক্ষ। আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ করছি। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বহু অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে।’
কেকে