ঢাকা ০২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেনাবাহিনীর হাতে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মারধরের অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী সেনাবাহিনীর হাতে শারীরিকভাবে মারধরের শিকার হয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি তৃতীয় বর্ষের সাদি সায়েম, দাবি করেছেন—সম্প্রতি ট্যুর শেষে হলে ফেরার পথে খিলক্ষেত-ইসিবি রোডে আর্মি চেকপোস্টে তাকে নির্মমভাবে লাঠিপেটা করা হয়।

ঘটনাটি ঘটে ২২ জুন গভীর রাতে। টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ঘুরে ঢাকায় ফিরছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষার্থী। রাত আনুমানিক ৩:১০ মিনিটে খিলক্ষেতে বাস থেকে নেমে তারা কয়েকটি সিএনজিতে ভাগ হয়ে নিজ নিজ হলে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে কুর্মিটোলা চেকপোস্ট পার হয়ে কালশীর স্টিল ব্রিজ এলাকায় এক আর্মি চেকপোস্টে তাদের সিএনজি থামানো হয়।

সেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির পরিচয়পত্র দেখালে, চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা সৈনিকরা শুরু করেন কটূক্তি ও প্রশ্নবাণ—“স্কুলে বলে গেছেন?” “হলে আপনার স্যার রুম চেক করেন না?” ইত্যাদি।

পরে শিক্ষার্থীদের একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন। কিন্তু এতে সৈনিকদের আচরণ আরও রুক্ষ হয়ে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সহকারী প্রভোস্ট হাসিবুল ইসলাম উপস্থিত থেকে ছেড়ে দিতে বললেও, সৈনিকরা বরং তার প্রতিও দুর্ব্যবহার করেন এবং শিক্ষার্থীদের আটকে রাখেন।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন ঘটনাস্থলে আরও দুটি পিকআপে করে অতিরিক্ত সেনা সদস্য এসে উপস্থিত হন। এক সিনিয়র অফিসার আসলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এসে উল্টো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, এরপর প্রায় ৮–১০ জন সেনা সদস্য মিলে সাদি সায়েমকে নির্মমভাবে প্রহার করেন।

ভুক্তভোগী বলেন,“৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ৫০-৬০ বার লাঠির আঘাত করা হয়। কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘাড় নিচু করিয়ে মারছিলেন যাতে জোরে লাগে। এক আঙুলে কেটে গেছে, অন্যটিতে রক্ত জমে গেছে। বারবার সিএনজি থেকে নামিয়ে আবার পেটানো হয়। কান ধরে বসিয়ে বলতে বলা হয়—‘আমার ভুল হইছে, আমার শিক্ষা হইছে।’”

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাকে বেড রেস্টে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীনে পরিচালিত সরকারি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও এমন অমানবিক ঘটনার শিকার হওয়ায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন—একজন আইডি-ধারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন আচরণ কতটা আইনসঙ্গত? এবং এমন ঘটনা কি দেশের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না?

এমএস

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সেনাবাহিনীর হাতে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মারধরের অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৭:২৩:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী সেনাবাহিনীর হাতে শারীরিকভাবে মারধরের শিকার হয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি তৃতীয় বর্ষের সাদি সায়েম, দাবি করেছেন—সম্প্রতি ট্যুর শেষে হলে ফেরার পথে খিলক্ষেত-ইসিবি রোডে আর্মি চেকপোস্টে তাকে নির্মমভাবে লাঠিপেটা করা হয়।

ঘটনাটি ঘটে ২২ জুন গভীর রাতে। টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ঘুরে ঢাকায় ফিরছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষার্থী। রাত আনুমানিক ৩:১০ মিনিটে খিলক্ষেতে বাস থেকে নেমে তারা কয়েকটি সিএনজিতে ভাগ হয়ে নিজ নিজ হলে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে কুর্মিটোলা চেকপোস্ট পার হয়ে কালশীর স্টিল ব্রিজ এলাকায় এক আর্মি চেকপোস্টে তাদের সিএনজি থামানো হয়।

সেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির পরিচয়পত্র দেখালে, চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা সৈনিকরা শুরু করেন কটূক্তি ও প্রশ্নবাণ—“স্কুলে বলে গেছেন?” “হলে আপনার স্যার রুম চেক করেন না?” ইত্যাদি।

পরে শিক্ষার্থীদের একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন। কিন্তু এতে সৈনিকদের আচরণ আরও রুক্ষ হয়ে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সহকারী প্রভোস্ট হাসিবুল ইসলাম উপস্থিত থেকে ছেড়ে দিতে বললেও, সৈনিকরা বরং তার প্রতিও দুর্ব্যবহার করেন এবং শিক্ষার্থীদের আটকে রাখেন।

পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন ঘটনাস্থলে আরও দুটি পিকআপে করে অতিরিক্ত সেনা সদস্য এসে উপস্থিত হন। এক সিনিয়র অফিসার আসলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এসে উল্টো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, এরপর প্রায় ৮–১০ জন সেনা সদস্য মিলে সাদি সায়েমকে নির্মমভাবে প্রহার করেন।

ভুক্তভোগী বলেন,“৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ৫০-৬০ বার লাঠির আঘাত করা হয়। কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘাড় নিচু করিয়ে মারছিলেন যাতে জোরে লাগে। এক আঙুলে কেটে গেছে, অন্যটিতে রক্ত জমে গেছে। বারবার সিএনজি থেকে নামিয়ে আবার পেটানো হয়। কান ধরে বসিয়ে বলতে বলা হয়—‘আমার ভুল হইছে, আমার শিক্ষা হইছে।’”

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাকে বেড রেস্টে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীনে পরিচালিত সরকারি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও এমন অমানবিক ঘটনার শিকার হওয়ায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন—একজন আইডি-ধারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন আচরণ কতটা আইনসঙ্গত? এবং এমন ঘটনা কি দেশের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না?

এমএস