আইনজীবীদের রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত না হয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বুধবার (১৯ মার্চ) বিকেলে রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিল আয়োজিত ‘মাহে রমাদানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মহফিল’ এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আদালত অঙ্গনে আমি বহুবার এসেছি; মুক্ত মানুষ হিসেবে নয়, বন্দি হিসেবে। আজ মুক্ত পরিবেশে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরে এবং আপনাদের দোয়া নেওয়ার সুযোগ পেয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ। দুনিয়াতে বহু পেশা আছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, সাংবাদিক কিন্তু কারো নামের আগে বিজ্ঞ শব্দ ব্যবহার করা হয় না। শুধু আইনজীবীদের নামের পূর্বেই বিজ্ঞ শব্দ ব্যবহার করা হয়। বার ও বেঞ্চ নিয়েই বিচার কার্যক্রম। আইনজীবীগণ বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আইনজীবীদেরকে পলিটিক্যালি মোটিভেটেড না হয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন। মানবজীবনের জন্য দুটো গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক দিক রয়েছে। একটি আদালত আরেকটি চিকিৎসা। এ দুটো জায়গা ঠিক হয়ে গেলে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে অর্থাৎ সমাজ ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের দেশে এই দুটোই করুন অবস্থায় রয়েছে। বলতে গেলে ন্যায়বিচার আজ নির্বাসনে। আর স্বাস্থ্যখাতে চলছে চরম অনিয়ম।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হলে দেশের নাগরিকগণ গর্বিত হতে পারত। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষার কোনো নৈতিক মান নেই। যার কারণে আমরা বিশ্বের কোথাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি না। বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো র্যাংক নেই বললেই চলে। আমাদেরকে এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যে শিক্ষা মানুষকে মানুষ হতে শেখায়, মানুষকে সম্মান দিতে শেখায় সে শিক্ষা না থাকায় সমাজে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে ব্রিটিশ ল’কে ‘মাদার ল’ বলা হয়। কিন্তু প্রকৃত মাদার ল’ হচ্ছে
কোরআনের আইন। ইসলামের আইনকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আজ পর্যন্ত কোনো আইন তৈরি হয়নি। অনেক আইন আছে যা এসেছে কোরআন থেকে। যার কারণে বিদ্যমান অনেক আইন কোরআনের সাথে খুব বেশি সাংঘর্ষিক নয়। কুরআনের আইনের ভিত্তিতে এক মানবিক সমাজ গঠনে সকলকে আন্তরিক হতে হবে।
শফিকুর রহমান আরও বলেন, আইনজীবীগণ বিচারকার্যে বিচারকদের সহায়তা করে থাকেন। এমন এক দিন আসবে যেই দিনটিকে শেষ বিচারের দিন বলা হয়। সেইদিন কেউ কাউকে সহায়তা করতে পারবে না। সেই দিন বাদী, আসামি, আইনজীবী, সাক্ষী, বিচারক সকলকে এক কাতারে থাকতে হবে। সেইদিন বিচারকের আসনে থাকবেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন। সেইদিন নেক কাজের ইনসেনটিভ দেওয়া হবে। সেইদিন যে কামিয়াব হবে সেই হবে প্রকৃত সফল। সেইদিনের সফলতার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।
আমিরে জামায়াত বলেন, আল্লাহ তাআলা চাইলে তার বান্দাদের জন্য রিযিকের ব্যবস্থা করেন। কাজেই আমাদেরকে আল্লাহর ওপরই ভরসা করতে হবে। রোজার শেষ প্রান্তে আমরা উপনীত হয়েছি। এই শেষ ১০ দিন হচ্ছে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার দিন। আমাদের সবাইকে এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, ড. মোহাম্মাদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন মিঠু, মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, খন্দকার রেজাউল করিম আব্দুল বাতেন, ড. গোলাম রহমান ভুইয়া, মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন, আবু বাক্কার সিদ্দিক, আব্দুল করিম, মোহাম্মদ উজ্জ্বল, আজমত হোসাইন প্রমুখ।
কেকে