রুবেল হাসান,শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় সাংবাদিক পরিচয়ে স্বক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু চক্র। ফেক আইডি খুলে মানুষের চরিত্র হনন, বাল্য বিয়ে থেকে জেল জরিমানার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদাবাজি, হোটেলে খেয়ে টাকা না দেয়া সহ নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন সংঘবদ্ধ এই চক্রের সদস্যরা। সাধারণ মানুষ এই চক্রের কাছে জিম্বি হয়ে আছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার সাথে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আজকের পত্রিকাকে তারা বলেন, ফেক আইডি খুলে নেতাদের সন্মান হানি করা হচ্ছে। সাংবাদিক পরিচয়ে যেখানে সেখানে গিয়ে টাকা দাবি করছে। টাকা নিচ্ছেও। আমরা বুঝতে পারছিনা মূল ধারার সাংবাদিক করা এবং অসাংবাদিক কারা। এসব নিয়ে আমরা নিজেরােই আতংকে আছি। একেক জন এসে একেক পোর্টাল, পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলর নাম বলে যা আগে শুনি নাই। এই শুনিনাই কথা ওই সাংবাদিকদের কানে গেলে এমন ভাবে অপপ্রচার চালাবে যে লজ্বায় আর মুখ দেখানোই যাবে না।
বৃহস্পতিবার(১৩মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার নয়মাইল বাস স্ট্যান্ড এলাকায় তাজ হাইওয়ে হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এ সাংবাদিক পরিচয়ে খেয়ে বিল না দেয়ায় এক ব্যক্তি লাঞ্চিত হয়েছেন। লাঞ্চিত হওয়া ব্যক্তি উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের নগর জোয়ারদারপাড়া গ্রামের আনছার আলীর ছেলে রেজওয়ানুল হক শাহিন।(৩৫)। জাতীয় দৈনিক ‘নাগরিক ভাবনা’ পত্রিকার বগুড়া জেলা প্রতিনিধি বলে নিজেকে দাবি করেছেন। এবং “আমার প্রাণের বাংলাদেশ” নামক একটি পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার (ক্রাইম) বলেও নিজেকে দাবি করেছেন।
অপরদিকে লাঞ্চিত হওয়ার পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করে নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোষ্ট দেন শাহিন। যা ফেসবুকে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পত্রিকা থেকে শাহিনকে বাদ দেয়ার ঘটনায় আরেকটি বিবৃতিও ফেসবুকে সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে জানাযায়, রেজওয়ানুল হক শাহিন শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট উপজেলা এবং বগুড়া শহরের কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সংঘবদ্ধ একটি চক্র। সাংবাদিক পরিচয়ে দোকান থেকে খেয়ে বিল না দেয়া, জেল জরিমানার ভয় দেখিয়ে ব্যাল্য বিয়ে থেকে টাকা নেয়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মোটরসাইকেলে তেল এবং মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে চাঁদা নেয়া, সন্মানহানি করে টাকা আদায় সহ নানা অপরাধ করে আসছে এই চক্রটি।
তাজ হাইওয়ে হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মোঃ তাজুল ইসলাম বেলাল বলেন, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রেজওয়ানুল হক শাহিন প্রায়ই আমার এখানে খেয়ে টাকা দিত না। ১১মার্চ রাতে আমি হোটেলে ছিলাম না। কর্মচারীদের নিষেধ করেছিলাম, কাউকেই টাকা ছাড়া খাবার না দিতে। সেই রাতে রেজওয়ানুল হক শাহীন এসে আবারো খেলে আমার কর্মচারীরা টাকা চায়। এতে শাহিন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গালাগালি দেন।
এই ঘটনার পরে “হাইওয়ে হেটেল গুলোতে মাদক ব্যবসা হচ্ছে” লিখে রেজওয়ানুল হক শাহিন ফেসবুকে পোষ্ট দেন। শাহিনের সাথে দেখা হলে এই ঘটনা জানতে চাই এবং উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। ফ্রি খেতে না পেরে শাহিন আমার নামে ফেসবুকে লিখে সন্মানহানি করেছে বলে হোটেল মালিক তাজুল ইসলাম বেলাল দাবি করেন।
আড়িয়া ইউনিয়নের নয়মাইল বাস স্ট্যান্ডের ভলকানাইজিং ব্যবসায়ী মোঃ ইমরান হোসেন বলেন, রেজওয়ানুল হক শাহিন এবং শাজাহানপুর উপজেলার শিবলু নামের আরেকজন সাংবাদিক পরিচয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন। বিভিন্ন কথা বলে আমার কাছে মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দাবি করেন। সাংবাদিকরা আসলে টাকা দিতে হয় কোন কারণ লাগেনা বলেও আমাকে বলেছিলেন। তখন মিষ্টি খাওয়ার জন্য আমি কিছু টাকা দিয়েছিলাম।
আমরুল ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের আমিনবাজার এলাকার কীটনাশক ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় একমাস আগে রেজওয়ানুল হক শাহিন সাংবাদিক পরিচয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসেন। বিভিন্ন কথা বলে আমাকে ভয় দেখিয়ে ১০হাজার টাকা দাবি করেন। সে সময় শাহিনের সাথে বগুড়া শেরপুর, শাজাহানপুর এবং বগুড়া শহরের সহ প্রায় ৭জন ছিলেন। আমি টাকা দেয়ার জন্য সময় নেই। টাকা নেয়ার জন্য ওরা কয়েকদিন আমাকে কয়েকটি নাম্বার থেকে ফোন করে ভয় দেখিয়েছে। পরে ওদের আর টাকা দেই নাই।
শাজাহানপুরে একটি বিদ্যালয়ে মালি পদে চাকুরি করতেন রেজওয়ানুল হক শাহিন। জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোনে বলেন, এসএসসি পাশ শাহিন অস্থায়ী ভিত্তিতে আমার স্কুলে ছিলো। ছেলেটা খারাপ হওয়ার কারণে দুই বছর আগে স্কুল থেকে ওকে বের করে দিয়েছি।
জানতে চাইলে রেজওয়ানুল হক শাহিন মোবাইল ফোনে বলেন, দৈনিক নাগরিক ভাবনা পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি পদে কর্মরত আছি। তাজ হাইওয়ে হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টের মালিক বেলাল ভুল বুঝে আমাকে মেরেছেন। আমি কোন হোটেলের নাম উল্লেখ করে ফেসবুকে পোষ্ট দেইনি।
শিক্ষাগত যোগ্যতা কতখানি এবং অপানার লেখভা প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য সংবাদ কি আছে জানতে চাইলে রেজওয়ানুল হক শাহিন বলেন, আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলবো। এরপর থেকে রেজওয়ানুল হক শাহিনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কখনো খুললেও কল রিসিভ করছেন না।
এমএস