ঢাকা ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতের নিয়ন্ত্রিত নদীর পানি পাকিস্তান পাবে না: নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মীরে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর বহু ঘটনা ঘটে গেছে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে। এবার নতুন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এমন কোনো নদীর পানি পাকিস্তান পাবে না। খবর রয়টার্সের।

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তির আওতায় ভারত থেকে উৎপন্ন তিনটি নদীর পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত হয় এবং এর ওপর নির্ভর করে দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজমি। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হওয়া ভয়াবহ হামলার পর এ চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয় ভারত।

ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তানের সমর্থনে এ হামলা চালানো হয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ তা সরাসরি অস্বীকার করেছে। এরপর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে উত্তেজনাকর সামরিক সংঘাতের সূচনা হয়, যা অবশেষে ১০ মে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে কিছুটা প্রশমিত হয়।

রাজস্থানে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে চরম মূল্য দিতে হবে—এ মূল্য দেবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, দেবে তাদের অর্থনীতি।

যদিও পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি দাবি করেছেন, সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের ফলে তৎক্ষণাৎ কোনো বড় প্রভাব পড়বে না, তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশটির কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ডাচ সংবাদমাধ্যম এনওএসকে বলেন, সামরিক অভিযান এখনও চলছে। একটি বিষয় পরিষ্কার করে বলা হয়েছে—যদি আরেকটি ২২ এপ্রিলের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে জবাব দেওয়া হবে। যারা সন্ত্রাসে জড়িত, তাদের উপরই আঘাত আসবে।

তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা যদি পাকিস্তানের মাটিতে থাকে, তাহলে আমরা তাদের সেখানেই আঘাত করব।

মোদি ও জয়শঙ্করের বক্তব্যের পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বৈরিতায় ভরা। তারা তিনবার যুদ্ধ করেছে, যার মধ্যে দুটি হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। ভারত বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তান কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দেয়, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে আসছে।

সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে—যেমন সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ, স্থল সীমান্ত অচল এবং অধিকাংশ ভিসা স্থগিত রাখা। পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও উত্তেজনার আঁচ এখনো বিদ্যমান।

কেকে

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতের নিয়ন্ত্রিত নদীর পানি পাকিস্তান পাবে না: নরেন্দ্র মোদি

আপডেট সময় : ০৯:২৯:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

কাশ্মীরে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর বহু ঘটনা ঘটে গেছে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে। এবার নতুন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ভারতের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এমন কোনো নদীর পানি পাকিস্তান পাবে না। খবর রয়টার্সের।

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তির আওতায় ভারত থেকে উৎপন্ন তিনটি নদীর পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত হয় এবং এর ওপর নির্ভর করে দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজমি। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হওয়া ভয়াবহ হামলার পর এ চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয় ভারত।

ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তানের সমর্থনে এ হামলা চালানো হয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ তা সরাসরি অস্বীকার করেছে। এরপর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে উত্তেজনাকর সামরিক সংঘাতের সূচনা হয়, যা অবশেষে ১০ মে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে কিছুটা প্রশমিত হয়।

রাজস্থানে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার জন্য পাকিস্তানকে চরম মূল্য দিতে হবে—এ মূল্য দেবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, দেবে তাদের অর্থনীতি।

যদিও পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি দাবি করেছেন, সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের ফলে তৎক্ষণাৎ কোনো বড় প্রভাব পড়বে না, তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশটির কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ডাচ সংবাদমাধ্যম এনওএসকে বলেন, সামরিক অভিযান এখনও চলছে। একটি বিষয় পরিষ্কার করে বলা হয়েছে—যদি আরেকটি ২২ এপ্রিলের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে জবাব দেওয়া হবে। যারা সন্ত্রাসে জড়িত, তাদের উপরই আঘাত আসবে।

তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা যদি পাকিস্তানের মাটিতে থাকে, তাহলে আমরা তাদের সেখানেই আঘাত করব।

মোদি ও জয়শঙ্করের বক্তব্যের পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বৈরিতায় ভরা। তারা তিনবার যুদ্ধ করেছে, যার মধ্যে দুটি হয়েছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। ভারত বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তান কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দেয়, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে আসছে।

সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে—যেমন সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ, স্থল সীমান্ত অচল এবং অধিকাংশ ভিসা স্থগিত রাখা। পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও উত্তেজনার আঁচ এখনো বিদ্যমান।

কেকে