সৌভিক পোদ্দার, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের শৈলকূপায় কৃষকদল নেতা ও তার ছেলের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে এক নারীকে ধর্ষণ ও জোরপূর্বক গর্ভপাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী যুবতী ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে কৃষকদল নেতাসহ চারজনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। ধর্ষণ, গর্ভপাত ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।
সেই অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশ প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায় বলে জানিয়েছেন এসআই সম্রাট মন্ডল (তদন্তকারী কর্মকর্তা)।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী নারী সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে ওই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন নাজমুল খন্দকার নামের এক যুবক। নাজমুল শৈলকূপা উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব কামরুল ইসলামের ছেলে। ওই নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নাজমুল খন্দকার নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। তাদের সম্পর্কের বিষয়টি নাজমুলের পরিবারের সবাই জানার পরে তারা ওই সম্পর্ক মেনে নেয়। এরপর ওই নারী নাজমুলের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী নারী গর্ভবর্তী হয়ে পড়লে নাজমুল ও তার বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা কৌশলে ওই নারীকে ঝিনাইদহ শহরের হামদহ এলাকার রয়েল ক্লিনিকে ভর্তি করে গর্ভপাত ঘটান।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগেই নাজমুল খন্দকার ও তার বাবা-মা ভুক্তভোগী নারীকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে নাজমুল খন্দকার ও তার বাবা-মায়ের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ওই নারী কোনো সমাধান পাননি। পরে তিনি শৈলকূপা থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা মামলা গ্রহণ করেনি। নাজমুল খন্দকারের বাবা কামরুল ইসলাম রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ওই নারীকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, দুই বছর ধরে নাজমুলের সঙ্গে তার সম্পর্ক। তার বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত থাকায় তার বাবা কামরুল ইসলামসহ পরিবারের সবাই আমাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু, আমি গর্ভবতী হয়ে পড়লে নাজমুলের পরিবারের লোকজন আমাকে মারধর করে। একপর্যায়ে তারা জোরপূর্বক আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেয়।
এ বিষয়ে কৃষকদল নেতার ছেলে নাজমুল খন্দকার বলেন, ওই নারীর অভিযোগ সত্য নয়। সে একজন প্রতারক। আমার নামে থানায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা, তা জানি না।
নাজমুলের বাবা শৈলকূপা উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব কামরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগকারী ওই নারী সম্পর্কে আমি খুব বেশি কিছু জানি না। তবে সে আমার বাড়িতে আসা-যাওয়া করত। গর্ভপাত ও হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ সময় তিনি প্রতিবেদককে নিউজটি এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
শৈলকূপা থানার এসআই সম্রাট মন্ডল বলেন, ওই নারীর অভিযোগ পেয়ে পারিপার্শ্বিকতা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, ভুক্তভোগী নারীকে বিয়ের প্রলোভনে ফেলে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা সেটা জেনেছি। এ বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ হাতে পেয়েছি। আদালত মামলা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এমএস