ঢাকা ০২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

অভিযোগকারী নোবেলের স্ত্রী, চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা: আইনজীবী

মাঈনুল আহসান নোবেল। ছবি : সংগৃহীত

ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেলকে (৩১) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে নোবেলকে সিএমএম আদালতে আনা হয়। বেলা তিনটার দিকে তাকে আদালতকক্ষে তোলা হয়।

নোবেলের পক্ষে তার আইনজীবী জসিম উদ্দিন জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, মামলার ঘটনা গত বছরের ১২ নভেম্বর। আর বাদী আসামির স্ত্রী। গতকাল রাত পর্যন্ত তারা একই বাসায় ছিলেন। ভুল বোঝাবুঝিতে মামলা করেছে। মীমাংসার জন্য নোবেলকে থানায় ডেকে নেওয়ার পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। মেয়ে লিগ্যালি তার ওয়াইফ, চার মাসের প্রেগন্যান্ট। নোবেল তার সাথে সংসার করতে চায়। আমরা যেকোনো শর্তে আপস করতে ইচ্ছুক।

এ সময় বিচারক কাবিননামা আছে কি না জানতে চান। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, তাড়াহুড়োর কারণে কাবিননামা আনা হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি এই আসামি সাংসারিক, ব্যক্তিজীবন নিয়ে ভালো অবস্থায় নেই। বাদী দাবি করেছেন, ইডেন কলেজে তিনি অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয়। পরে ফোনে কথাবার্তা হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর তাদের দেখা হয়। আসামি বাদীকে তার ডেমরার স্টুডিওতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আটকে রেখে ২/৩ জনের সহায়তায় ধর্ষণ করে, মারধর করে।

জানা যায়, গতকাল সোমবার নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই তরুণী। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী ইডেন কলেজের ছাত্রীর সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের ১২ নভেম্বর গায়ক নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ভুক্তভোগীকে ডেমরা থানা এলাকায় তার বাসায় নিয়ে যায়। এরপর কয়েকজন আসামির সহায়তায় ওই ছাত্রীকে আটকে রাখে।

এরপর ১২ নভেম্বর রাত ৮টার সময় ভুক্তভোগীকে আটক করে রাখে এবং তার মোবাইল নিয়ে নেয়। বাদী তার পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য আসামিকে মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার জন্য বললে নোবেল ওই ছাত্রীর ২৬ হাজার টাকার রেডমি ১০-প্রো মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে। এরপর আসামি নোবেল তার বসতঘরে আটক রেখে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখে। নোবেলের কথামতো বাসায় না থাকলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে জানায়। তাই বাদী আসামীর ভয়ে কাউকে কোনো কিছু বলার সাহস পাননি।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর থেকে গত ১৯ মে পর্যন্ত বাদীকে মারপিট করতো। আসামি তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরো ২ থেকে ৩ জনের সহায়তায় বাদীকে সিঁড়ি দিয়ে চুলের মুটি ধরে টানাহেঁচড়া করে অপর একটি কক্ষে আটক করে রাখে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বাদীর পিতা-মাতা বাদীকে চিনতে পারে। এরপর তার পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত নানা আচরণের কারণে বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেনে নোবেল। একাধিক বিয়ে করেও আলোচনায় এসেছিলেন এই গায়ক। কিন্তু কোনো সংসারই স্থায়ী হয়নি। ২০১৯ সালে সালসাবিল মাহমুদকে বিয়ে করে আলোচনার সৃষ্টি করেন নোবেল। কিন্তু মাদক ত্যাগ না করায় সে সংসার টেকেনি। এরপর ২০২৩ সালের শেষে ফের নোবেলের বিয়ের খবর সামনে আসে।

প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জি বাংলার গানের শো ‘সা রে গা মা পা’য় অংশ নিয়ে সবার নজরে আসেন নোবেল। তার গান দর্শকের মনে স্থান করে নেয়। পরে তার বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা পায়। তবে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বরাবরই তাকে ঘিরে আলচনা-সমালোচনা ছিল। একটা সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে শো করতে গেলেও সেখানেও তাকে নিয়ে সমালোচনা হয়। ২০২৩ সালে কুড়িগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন তিনি। কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নোবেলের আচরণে বিরক্ত হয়ে দর্শকরা জুতা ও পানির বোতল ছুড়ে মারেন এ শিল্পীর দিকে। সেই ঘটনাটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

কেকে

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজনীতিকে অপছন্দ করা মানুষরাই দেশ চালাচ্ছে: মান্না

অভিযোগকারী নোবেলের স্ত্রী, চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা: আইনজীবী

আপডেট সময় : ০৯:৪৪:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার সংগীতশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেলকে (৩১) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে নোবেলকে সিএমএম আদালতে আনা হয়। বেলা তিনটার দিকে তাকে আদালতকক্ষে তোলা হয়।

নোবেলের পক্ষে তার আইনজীবী জসিম উদ্দিন জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, মামলার ঘটনা গত বছরের ১২ নভেম্বর। আর বাদী আসামির স্ত্রী। গতকাল রাত পর্যন্ত তারা একই বাসায় ছিলেন। ভুল বোঝাবুঝিতে মামলা করেছে। মীমাংসার জন্য নোবেলকে থানায় ডেকে নেওয়ার পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। মেয়ে লিগ্যালি তার ওয়াইফ, চার মাসের প্রেগন্যান্ট। নোবেল তার সাথে সংসার করতে চায়। আমরা যেকোনো শর্তে আপস করতে ইচ্ছুক।

এ সময় বিচারক কাবিননামা আছে কি না জানতে চান। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, তাড়াহুড়োর কারণে কাবিননামা আনা হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি এই আসামি সাংসারিক, ব্যক্তিজীবন নিয়ে ভালো অবস্থায় নেই। বাদী দাবি করেছেন, ইডেন কলেজে তিনি অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয়। পরে ফোনে কথাবার্তা হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর তাদের দেখা হয়। আসামি বাদীকে তার ডেমরার স্টুডিওতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আটকে রেখে ২/৩ জনের সহায়তায় ধর্ষণ করে, মারধর করে।

জানা যায়, গতকাল সোমবার নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই তরুণী। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী ইডেন কলেজের ছাত্রীর সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের ১২ নভেম্বর গায়ক নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ভুক্তভোগীকে ডেমরা থানা এলাকায় তার বাসায় নিয়ে যায়। এরপর কয়েকজন আসামির সহায়তায় ওই ছাত্রীকে আটকে রাখে।

এরপর ১২ নভেম্বর রাত ৮টার সময় ভুক্তভোগীকে আটক করে রাখে এবং তার মোবাইল নিয়ে নেয়। বাদী তার পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য আসামিকে মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার জন্য বললে নোবেল ওই ছাত্রীর ২৬ হাজার টাকার রেডমি ১০-প্রো মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে। এরপর আসামি নোবেল তার বসতঘরে আটক রেখে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখে। নোবেলের কথামতো বাসায় না থাকলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে জানায়। তাই বাদী আসামীর ভয়ে কাউকে কোনো কিছু বলার সাহস পাননি।

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর থেকে গত ১৯ মে পর্যন্ত বাদীকে মারপিট করতো। আসামি তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরো ২ থেকে ৩ জনের সহায়তায় বাদীকে সিঁড়ি দিয়ে চুলের মুটি ধরে টানাহেঁচড়া করে অপর একটি কক্ষে আটক করে রাখে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বাদীর পিতা-মাতা বাদীকে চিনতে পারে। এরপর তার পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত নানা আচরণের কারণে বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেনে নোবেল। একাধিক বিয়ে করেও আলোচনায় এসেছিলেন এই গায়ক। কিন্তু কোনো সংসারই স্থায়ী হয়নি। ২০১৯ সালে সালসাবিল মাহমুদকে বিয়ে করে আলোচনার সৃষ্টি করেন নোবেল। কিন্তু মাদক ত্যাগ না করায় সে সংসার টেকেনি। এরপর ২০২৩ সালের শেষে ফের নোবেলের বিয়ের খবর সামনে আসে।

প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জি বাংলার গানের শো ‘সা রে গা মা পা’য় অংশ নিয়ে সবার নজরে আসেন নোবেল। তার গান দর্শকের মনে স্থান করে নেয়। পরে তার বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা পায়। তবে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বরাবরই তাকে ঘিরে আলচনা-সমালোচনা ছিল। একটা সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে শো করতে গেলেও সেখানেও তাকে নিয়ে সমালোচনা হয়। ২০২৩ সালে কুড়িগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেন তিনি। কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নোবেলের আচরণে বিরক্ত হয়ে দর্শকরা জুতা ও পানির বোতল ছুড়ে মারেন এ শিল্পীর দিকে। সেই ঘটনাটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

কেকে