ঢাকা ০২:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

হাসিনাকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখুন: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি : সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে উস্কানিমূলক বক্তব্য যেন আর না দেয়, নরেন্দ্র মোদিকে সেই অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) ব্যাংককের হোটেল সাংগ্রিলা ব্যাংককে ৪০ মিনিটের বৈঠক শেষে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরে।

এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নরেন্দ্র মোদির কাছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে বাংলাদেশের অনুরোধের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উসকানিমূলক মন্তব্য করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন, যা ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার বলে মনে হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ও উস্কানিমূলক অভিযোগ করে আসছেন।’

প্রধান উপদেষ্টার এই কথার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়ী করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘ভারতের সম্পর্ক একটি দেশের সঙ্গে; কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে নয়।’

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মতো ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হলো। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন।

এদিকে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট বিমসটেকের দ্বিতীয় দিনে পাঁচ রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) বিমসটেক সম্মেলন শেষে প্রধান উপদেষ্টা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন।

এরপর থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ড. ইউনূস। পরে দুই বছরের জন্য বিমসটেকের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান থাই প্রধানমন্ত্রী। এ সময় দুই নেতা নিজেদের উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরে ড. ইউনূস ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এ সময় তারা আঞ্চলিক উন্নয়নে পারস্পরিক সহায়তার কথা বলেন।

এদিন হোটেল সাংগ্রিলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিনি অমরসুরিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেন। এ সময় নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একে অপরকে সহায়তার কথা বলেন দুই নেতা। এ ছাড়া এদিনে বিকেলে ড. ইউনূস মিয়ানমারের সরকার প্রধানের সঙ্গে সাংগ্রিলার লবিতে হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে বৈঠকের পরই নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স পোস্টে বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি গঠনমূলক ও জনকেন্দ্রিক সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মোদি আরও লিখেছেন, আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা রোধের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য আমাদের গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিমসটেক আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বিশেষ করে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পরিবহন, জ্বালানি ও সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃআঞ্চলিক জোট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

কেকে

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ভোট ও অর্থ বিল নিয়ে সবাই একমত হয়েছে : সালাহউদ্দিন আহমেদ

হাসিনাকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখুন: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আপডেট সময় : ১০:৫০:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে উস্কানিমূলক বক্তব্য যেন আর না দেয়, নরেন্দ্র মোদিকে সেই অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) ব্যাংককের হোটেল সাংগ্রিলা ব্যাংককে ৪০ মিনিটের বৈঠক শেষে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরে।

এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নরেন্দ্র মোদির কাছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে বাংলাদেশের অনুরোধের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উসকানিমূলক মন্তব্য করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন, যা ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার বলে মনে হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা ও উস্কানিমূলক অভিযোগ করে আসছেন।’

প্রধান উপদেষ্টার এই কথার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়ী করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘ভারতের সম্পর্ক একটি দেশের সঙ্গে; কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে নয়।’

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মতো ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হলো। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপ্রতিনিধি খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন।

এদিকে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট বিমসটেকের দ্বিতীয় দিনে পাঁচ রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (০৪ এপ্রিল) বিমসটেক সম্মেলন শেষে প্রধান উপদেষ্টা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন।

এরপর থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ড. ইউনূস। পরে দুই বছরের জন্য বিমসটেকের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান থাই প্রধানমন্ত্রী। এ সময় দুই নেতা নিজেদের উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরে ড. ইউনূস ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এ সময় তারা আঞ্চলিক উন্নয়নে পারস্পরিক সহায়তার কথা বলেন।

এদিন হোটেল সাংগ্রিলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিনি অমরসুরিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করেন। এ সময় নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একে অপরকে সহায়তার কথা বলেন দুই নেতা। এ ছাড়া এদিনে বিকেলে ড. ইউনূস মিয়ানমারের সরকার প্রধানের সঙ্গে সাংগ্রিলার লবিতে হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে বৈঠকের পরই নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স পোস্টে বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি গঠনমূলক ও জনকেন্দ্রিক সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মোদি আরও লিখেছেন, আমি বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা রোধের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য আমাদের গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিমসটেক আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বিশেষ করে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পরিবহন, জ্বালানি ও সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃআঞ্চলিক জোট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

কেকে