ঢাকা ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভেড়ামারার শাহার পেট্রল পাম্প মালিকের জালিয়াতি

ছবি : সংগৃহীত

মোঃ বাবুল আক্তার, ভেড়ামারা (উপজেলা) প্রতিনিধি:

ভেড়ামারায় জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে সেই ভুয়া ডকুমেন্ট জমা দিয়ে পেট্রল পাম্পের লাইসেন্স নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন জমির লীজ না নিয়ে সেচ খালের ওপর অবৈধভাবে কালভার্ট নির্মাণ করে পেট্রল পাম্পের সামনে মাটি ভরাট করা হয়েছে। এর ফলে পাউবোর উন্মুক্ত সেচ খালটি বর্তমানে পেট্রল পাম্পের পেটের ভেতরে আটকে পড়েছে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কের ভেড়ামারা বারোমাইল নামক স্থানে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে পেট্রল পাম্পের লাইসেন্স পেয়েছে মেসার্স শাহার ফিলিং ষ্টেশন।

বিগত আওয়ামী লীগ আর এই জালিয়াতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত পেট্রল পাম্পটির মালিক মীর মোঃ সায়েরুজ্জামান।
তিনি বিগত সরকারের আমলে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রভাব খাটিয়ে পেট্রল পাম্পের লাইসেন্স বাগিয়ে নেন।

ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এবং পাউবোর কর্মকর্তার স্বাক্ষর নকল করে, জমির দাগ নম্বর সঠিকভাবে উল্লেখ না করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচখালের ওপর নিজ খরচে কালভার্ট নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিল শাহারা ফিলিং ষ্টেশন।সেই আবেদনের জমা দেওয়ার রিসিভ কপি দিয়ে কৌশলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনাপত্তি সনদপত্রও নেয়া হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর (পওর বিভাগ) দপ্তরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী অসীম কুমার বরাত দিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরকম কোন অনুমতি পত্র মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনকে দেওয়া হয়নি।

এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঐসময় সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং লীজ না নিয়ে সেচ খালের ওপর অবৈধ কালভার্ট নির্মাণ কেন করছেন জানতে চাইলে তাদের সাথে পাম্পের লোকজন খারাপ আচরন করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড তৎকালীন সময়ে মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনের মালিক মীর মোঃ সায়েরুজ্জামানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তিনি অবৈধভাবে সেচ খালের ওপর মাটি ভরাট করেন।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ার জিয়াউল হক সাথে কথা হলে জানা যায়, যাতায়াতের প্রবেশ পথ হিসেবে ব্যবহারের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ৭.২২ শতক জমির ইজারা বন্দোবস্তের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার স্বাক্ষরিত একটি ভুয়া ইজারা বন্দোবস্ত চুক্তিনামা তৈরি করা হয়। স্মারক নম্বর ও ২১-০৪-১৫ ইং তারিখে স্বাক্ষরিত এমন কোন কাগজপত্র সওজ বিভাগ কুষ্টিয়াতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার মানে কোন জমির ইজারা না নিয়েই জমি ব্যবহার করে যাচ্ছেন। নকল সেই চুক্তিনামাতে সওজের তিন কর্মকর্তা স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

এটা প্রমাণিত হয় যে, ইজারা বন্দোবস্ত চুক্তিনামাটি ভুয়া ও জাল স্বাক্ষর দিয়ে তৈরি করেছেন মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশন।

কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার অনুকূলে পেট্রোলিয়াম রুলস ১৯৩৭ এর ১১৫ (৩) বিধি অনুযায়ী ফিলিং স্টেশন স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য অনাপত্তি সনদপত্র প্রদানে বাহিরচর পশ্চিম মৌজা থেকে যেসব আর এস দাগ নম্বর উল্লেখ করেছেন সেসব দাগ নম্বর গুলো যথাক্রমে ৯২২৫, ৯৩৭৩, ৯৩৭৪, ৯৩৭৫ কিন্তু প্রথমে যে জমি রয়েছে যার দাগ নম্বর ৯৩৫৮ সেটা অনাপত্তিপত্রে উল্লেখ না করে সনদপত্র নিয়েছেন।

মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনের মালিক মীর মোঃ সায়েরুজ্জামান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই রকম কাগজ কখনই জাল হয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়নি। এবং এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের চাঁদাবাজ বলে হুমকি ধামকিও দেন এই মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনের মালিক মীর মোঃ সায়েরুজ্জামান।

এই বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম এর সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বললে তিনি জানান যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এমএস

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ভেড়ামারার শাহার পেট্রল পাম্প মালিকের জালিয়াতি

আপডেট সময় : ০৯:৩৪:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

মোঃ বাবুল আক্তার, ভেড়ামারা (উপজেলা) প্রতিনিধি:

ভেড়ামারায় জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে সেই ভুয়া ডকুমেন্ট জমা দিয়ে পেট্রল পাম্পের লাইসেন্স নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন জমির লীজ না নিয়ে সেচ খালের ওপর অবৈধভাবে কালভার্ট নির্মাণ করে পেট্রল পাম্পের সামনে মাটি ভরাট করা হয়েছে। এর ফলে পাউবোর উন্মুক্ত সেচ খালটি বর্তমানে পেট্রল পাম্পের পেটের ভেতরে আটকে পড়েছে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়কের ভেড়ামারা বারোমাইল নামক স্থানে ভুয়া ও জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে পেট্রল পাম্পের লাইসেন্স পেয়েছে মেসার্স শাহার ফিলিং ষ্টেশন।

বিগত আওয়ামী লীগ আর এই জালিয়াতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত পেট্রল পাম্পটির মালিক মীর মোঃ সায়েরুজ্জামান।
তিনি বিগত সরকারের আমলে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে প্রভাব খাটিয়ে পেট্রল পাম্পের লাইসেন্স বাগিয়ে নেন।

ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এবং পাউবোর কর্মকর্তার স্বাক্ষর নকল করে, জমির দাগ নম্বর সঠিকভাবে উল্লেখ না করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচখালের ওপর নিজ খরচে কালভার্ট নির্মাণের জন্য আবেদন করেছিল শাহারা ফিলিং ষ্টেশন।সেই আবেদনের জমা দেওয়ার রিসিভ কপি দিয়ে কৌশলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনাপত্তি সনদপত্রও নেয়া হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর (পওর বিভাগ) দপ্তরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী অসীম কুমার বরাত দিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরকম কোন অনুমতি পত্র মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনকে দেওয়া হয়নি।

এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঐসময় সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং লীজ না নিয়ে সেচ খালের ওপর অবৈধ কালভার্ট নির্মাণ কেন করছেন জানতে চাইলে তাদের সাথে পাম্পের লোকজন খারাপ আচরন করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড তৎকালীন সময়ে মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনের মালিক মীর মোঃ সায়েরুজ্জামানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তিনি অবৈধভাবে সেচ খালের ওপর মাটি ভরাট করেন।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ার জিয়াউল হক সাথে কথা হলে জানা যায়, যাতায়াতের প্রবেশ পথ হিসেবে ব্যবহারের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ৭.২২ শতক জমির ইজারা বন্দোবস্তের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার স্বাক্ষরিত একটি ভুয়া ইজারা বন্দোবস্ত চুক্তিনামা তৈরি করা হয়। স্মারক নম্বর ও ২১-০৪-১৫ ইং তারিখে স্বাক্ষরিত এমন কোন কাগজপত্র সওজ বিভাগ কুষ্টিয়াতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার মানে কোন জমির ইজারা না নিয়েই জমি ব্যবহার করে যাচ্ছেন। নকল সেই চুক্তিনামাতে সওজের তিন কর্মকর্তা স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

এটা প্রমাণিত হয় যে, ইজারা বন্দোবস্ত চুক্তিনামাটি ভুয়া ও জাল স্বাক্ষর দিয়ে তৈরি করেছেন মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশন।

কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার অনুকূলে পেট্রোলিয়াম রুলস ১৯৩৭ এর ১১৫ (৩) বিধি অনুযায়ী ফিলিং স্টেশন স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য অনাপত্তি সনদপত্র প্রদানে বাহিরচর পশ্চিম মৌজা থেকে যেসব আর এস দাগ নম্বর উল্লেখ করেছেন সেসব দাগ নম্বর গুলো যথাক্রমে ৯২২৫, ৯৩৭৩, ৯৩৭৪, ৯৩৭৫ কিন্তু প্রথমে যে জমি রয়েছে যার দাগ নম্বর ৯৩৫৮ সেটা অনাপত্তিপত্রে উল্লেখ না করে সনদপত্র নিয়েছেন।

মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনের মালিক মীর মোঃ সায়েরুজ্জামান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এই রকম কাগজ কখনই জাল হয় না। পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়নি। এবং এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের চাঁদাবাজ বলে হুমকি ধামকিও দেন এই মেসার্স শাহার ফিলিং স্টেশনের মালিক মীর মোঃ সায়েরুজ্জামান।

এই বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম এর সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বললে তিনি জানান যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এমএস