ঢাকা ১২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

নাটোরে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

মনিরুল ইসলাম ডাবলু, নাটোর প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করা অবস্থায় মাছ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবির। গ্রামের মাছ চাষীদের কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাত করে বর্তমানে রয়েছেন আত্মগোপণে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মাছ চাষীরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবির ঢাকা ডিএমপিতে কল্যাণ ও ফোর্স বিভাগে কর্মরত আছেন। তার পরিচিতি নং- বিপি ৯৬১৫১৭৭০৭৭। বর্তমানে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। হুমায়ুন গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের পুরুলিয়া গ্রামের মো. হায়দার আলীর ছেলে। মাছ চাষীরা আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত ও অভিযুক্ত হুমায়ুনের বিচারের দাবীতে মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় উপজেলার পুরুলিয়া বাজারে মানববন্ধন ও ভিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মাছ চাষিসহ অন্তত ৫ শতাধীক মানুষ অংশ নেন।

ভুক্তভোগী মাছ চাষীরা জানান- গ্রামের ছেলে হওয়ায় বিশ্বাসের সাথে প্রায় ৪ বছর পূর্বে মাছের ব্যবসা শুরু করেন। শুরুতে হুমায়ুন তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে মাছ কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন। প্রথমদিকে নগদ মুল্যে লেন-দেন করলেও পরবর্তীতে বিশ্বস্থতায় সুযোগে বাঁকিতে মাছ কিনে মুঠোফোন বন্ধ রেখে লাপাত্তা ওই পুলিশ সদস্য। এলাকার অন্তত প্রায় ৬০ জন মাছ চাষিদের কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার মাছ বাকি নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন হুমায়ন।

এলাকাবাসী ভুক্তভোগী আলম, ফারুক, শরিফুল, শাহাদৎ, মেহেদী, আলামিন, রইসসহ অন্তত ১০ জনের সাথে কথা বলে জানাগেছে- চার বছর ধরে এলাকায় তিনি ও তা প্রতিনিধির মাধ্যমে মাছের ব্যবসা করেন। কিন্তু গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর দুমাসে চাষিদের অধিক লাভের প্রলোভন দিয়ে চড়াদামে বাকিতে মাছ কিনে রয়েছেন লাপাত্তা। শুধু গুরুদাসপুর নয় পার্শবর্তী বড়াইগ্রাম, সিংড়া, ও চাটমোহর উপজেলার অন্তত শতাধীক চাষিরা বাকিতে মাছ বিক্রি করে হয়েছেন প্রতারিত। পুরুলিয়ার রইস উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, তিনি গত মাসের শুরুতে হুমায়ুনের কাছে বাকিতে ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকার ৮ গাড়ি মাছ বিক্রি করেন। ১৫ দিন পর টাকা দেবার কথা বলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পলাতক রয়েছেন হুমায়ুন। তিনি টাকা ফেরৎসহ তার শাস্তির দাবী জানান।

একই এলাকার আলম জানান, তিনিও ওই প্রতারকের কাছে ১৬ লাখ ১১ হাজার টাকার ৪ গাড়িমাছ বিক্রি করেছেন। টাকার জন্য চাপসৃষ্টি করলে তাকে ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক দেয়া হয়। তারমতো অন্তত ১০জন চাষিকে ব্যাংক চেক দেয়া হয়। টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে তারা দেখেন প্রতারক হুমায়ন আগেই ওই নম্বরের চেকবহি হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। ভুক্তোভোগী চেক নিয়েও প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

টাকা ফিরে পেতে উজ্জল হোসেন বাদী হয়ে ১৫ জানুয়ারী গুরুদাসপুর থানায় প্রতারক হুমায়ুন ও তার ৮ সহযোগীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অপরদিকে মকলেছুর রহমান নামে অপর মাছ চাষি সিংড়া থানায় এবং পুলিশ সদর দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন। এতো অভিযোগের পরেও ওই প্রতারক রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে।

অভিযুক্ত প্রতারক পুলিশ সদস্য হুমায়ন কবিরের ব্যবহৃত মুঠোফোনে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়ায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাসায় গিয়েও পরিবারের কোন সদস্যকে পাওয়া যায়নি।

গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারওয়ার হোসেন জানান, হুমায়ন কবিরের নামে চাছ চাষিদের একাধীক অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুত্ব সহকারে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে আটকের চেষ্টাও চলছে।

এমএস

আরও পড়ুন…

১।নাটোরে তারুণ্যের উৎসব ‘২৫ উপলক্ষে যুব ও উদ্যোক্তা সমাবেশ

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

অনলাইন স্ক্যাম ও জালিয়াতি প্রতিরোধে নতুন ফিচার আনল হোয়াটসঅ্যাপ

নাটোরে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৮:৫৯:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

মনিরুল ইসলাম ডাবলু, নাটোর প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করা অবস্থায় মাছ ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলেন পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবির। গ্রামের মাছ চাষীদের কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাত করে বর্তমানে রয়েছেন আত্মগোপণে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মাছ চাষীরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবির ঢাকা ডিএমপিতে কল্যাণ ও ফোর্স বিভাগে কর্মরত আছেন। তার পরিচিতি নং- বিপি ৯৬১৫১৭৭০৭৭। বর্তমানে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। হুমায়ুন গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের পুরুলিয়া গ্রামের মো. হায়দার আলীর ছেলে। মাছ চাষীরা আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত ও অভিযুক্ত হুমায়ুনের বিচারের দাবীতে মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় উপজেলার পুরুলিয়া বাজারে মানববন্ধন ও ভিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মাছ চাষিসহ অন্তত ৫ শতাধীক মানুষ অংশ নেন।

ভুক্তভোগী মাছ চাষীরা জানান- গ্রামের ছেলে হওয়ায় বিশ্বাসের সাথে প্রায় ৪ বছর পূর্বে মাছের ব্যবসা শুরু করেন। শুরুতে হুমায়ুন তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা দিয়ে মাছ কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন। প্রথমদিকে নগদ মুল্যে লেন-দেন করলেও পরবর্তীতে বিশ্বস্থতায় সুযোগে বাঁকিতে মাছ কিনে মুঠোফোন বন্ধ রেখে লাপাত্তা ওই পুলিশ সদস্য। এলাকার অন্তত প্রায় ৬০ জন মাছ চাষিদের কাছ থেকে প্রায় ৭ কোটি টাকার মাছ বাকি নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন হুমায়ন।

এলাকাবাসী ভুক্তভোগী আলম, ফারুক, শরিফুল, শাহাদৎ, মেহেদী, আলামিন, রইসসহ অন্তত ১০ জনের সাথে কথা বলে জানাগেছে- চার বছর ধরে এলাকায় তিনি ও তা প্রতিনিধির মাধ্যমে মাছের ব্যবসা করেন। কিন্তু গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর দুমাসে চাষিদের অধিক লাভের প্রলোভন দিয়ে চড়াদামে বাকিতে মাছ কিনে রয়েছেন লাপাত্তা। শুধু গুরুদাসপুর নয় পার্শবর্তী বড়াইগ্রাম, সিংড়া, ও চাটমোহর উপজেলার অন্তত শতাধীক চাষিরা বাকিতে মাছ বিক্রি করে হয়েছেন প্রতারিত। পুরুলিয়ার রইস উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, তিনি গত মাসের শুরুতে হুমায়ুনের কাছে বাকিতে ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকার ৮ গাড়ি মাছ বিক্রি করেন। ১৫ দিন পর টাকা দেবার কথা বলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পলাতক রয়েছেন হুমায়ুন। তিনি টাকা ফেরৎসহ তার শাস্তির দাবী জানান।

একই এলাকার আলম জানান, তিনিও ওই প্রতারকের কাছে ১৬ লাখ ১১ হাজার টাকার ৪ গাড়িমাছ বিক্রি করেছেন। টাকার জন্য চাপসৃষ্টি করলে তাকে ইসলামী ব্যাংকের একটি চেক দেয়া হয়। তারমতো অন্তত ১০জন চাষিকে ব্যাংক চেক দেয়া হয়। টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে তারা দেখেন প্রতারক হুমায়ন আগেই ওই নম্বরের চেকবহি হারিয়ে গেছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। ভুক্তোভোগী চেক নিয়েও প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

টাকা ফিরে পেতে উজ্জল হোসেন বাদী হয়ে ১৫ জানুয়ারী গুরুদাসপুর থানায় প্রতারক হুমায়ুন ও তার ৮ সহযোগীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অপরদিকে মকলেছুর রহমান নামে অপর মাছ চাষি সিংড়া থানায় এবং পুলিশ সদর দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন। এতো অভিযোগের পরেও ওই প্রতারক রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে।

অভিযুক্ত প্রতারক পুলিশ সদস্য হুমায়ন কবিরের ব্যবহৃত মুঠোফোনে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়ায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাসায় গিয়েও পরিবারের কোন সদস্যকে পাওয়া যায়নি।

গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারওয়ার হোসেন জানান, হুমায়ন কবিরের নামে চাছ চাষিদের একাধীক অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুত্ব সহকারে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে আটকের চেষ্টাও চলছে।

এমএস

আরও পড়ুন…

১।নাটোরে তারুণ্যের উৎসব ‘২৫ উপলক্ষে যুব ও উদ্যোক্তা সমাবেশ