ঢাকা ০৬:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নাটোরে ৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রী পাশ – জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলেল সংবর্ধনা

ছবি : সংগৃহীত

মনিরুল ইসলাম ডাবলু, নাটোর প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে ৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস করে প্রশংসায় ভাসছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা উজানপাড়ার বৃদ্ধ মো. সাদেক আলী প্রামানিক। গত সোমবার ঘোষিত বিএসএস পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ২.৭৫ সিজিপিএ পেয়ে পাস করেছেন। সাদেক আলীর এমন সাফল্যে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে জেলা পুলিশ।

শনিবার (৩ মে) বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী সাদেক আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মনোয়ার হোসেন প্রমূখ।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পেশায় কৃষক সাদেক আলী প্রামানিক এক ছেলে এবং দুই মেয়ের বাবা। সাদেক আলী প্রামানিক ১৯৭৪ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৬ এইচএসসি পাস করেন। আর্থিক অনটন এবং বিভিন্ন সমস্যার কারণে আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন থেকে তিনি দূরে সরে যাননি। তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালে বাউবির অধীনে নাটোর দিঘাপতিয়া এম. কে. কলেজে ভর্তি হন। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাদেক আলীর পায়ের দুটি হাড় ভেঙে যায়। সেই ভাঙা পা নিয়ে তিনি ক্রাচে ভর দিয়ে দিয়ে ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। সোমবার প্রকাশিত ২০২২ সালের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে তিনি উত্তীর্ণ হওয়ায় সাদেক আলী ও তার পরিবারসহ খুশি এলাকাবাসী।

সাদেক আলী প্রামানিকের ছেলে নাটোরের দিঘাপাতিয়া এমকে কলেজের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বাবা ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের কখনোই ছাড় দিতেন না। আমরা তিন ভাইবোনকেই তিনি লেখাপড়া করিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমতে এখন সবাই আমরা প্রতিষ্ঠিত। বাবা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়েছিলেন, তারপর আর্থিক অনটনের জন্য আর পড়তে পারেননি। তবে ২০২০ সালে বাবা ইচ্ছে প্রকাশ করেন ডিগ্রি কমপ্লিট করবেন। প্রথমে আমরা মনে করেছি যে তিনি এমনিতেই বলছেন। পরে তার ইচ্ছায় তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয়। আল্লাহর রহমতে তিনি পাসও করেছেন। বাবার এমন সাফল্যে আমরা ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই অত্যন্ত খুশি। আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।

সাদেক আলী প্রামানিক বলেন, আল্লাহর রহমতে ছোটবেলা থেকেই আমি মেধাবী ছিলাম। প্রত্যেক ক্লাসেই আমার রোল ১ ছিল। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে সেভাবে পড়াশোনা করা হয়নি। দীর্ঘ দিন চলে যায়। তবু কেন জানি মনে হচ্ছিল জীবনে কিছু একটা বাদ আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম ডিগ্রি পরীক্ষা দেব। পরীক্ষার ভেতর আমার পা ভেঙে যায়। সেভাবেই কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে পাস করেছি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমিন নেলী বলেন,আমরা নাটোর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। ৭৫ বছর বয়েসে স্নাতক পাস করা বিষয়টি সত্যিই অনুপ্রেরনার। আমরা আশা করছি,উনাকে দেখে সবাই শিখবে,বয়স কোন বাধা,ইচ্ছা শক্তি থাকলে,শত বাধা পেরিয়েও সাফল্য অর্জন সম্ভব। আমাদের নাটোর জেলা পুলিশের পক্ষ উনার জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

এমএস

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নাটোরে ৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রী পাশ – জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলেল সংবর্ধনা

আপডেট সময় : ০৬:৩৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

মনিরুল ইসলাম ডাবলু, নাটোর প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে ৭৫ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস করে প্রশংসায় ভাসছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা উজানপাড়ার বৃদ্ধ মো. সাদেক আলী প্রামানিক। গত সোমবার ঘোষিত বিএসএস পরীক্ষার ফলাফলে তিনি ২.৭৫ সিজিপিএ পেয়ে পাস করেছেন। সাদেক আলীর এমন সাফল্যে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে জেলা পুলিশ।

শনিবার (৩ মে) বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলী সাদেক আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মনোয়ার হোসেন প্রমূখ।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পেশায় কৃষক সাদেক আলী প্রামানিক এক ছেলে এবং দুই মেয়ের বাবা। সাদেক আলী প্রামানিক ১৯৭৪ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৬ এইচএসসি পাস করেন। আর্থিক অনটন এবং বিভিন্ন সমস্যার কারণে আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন থেকে তিনি দূরে সরে যাননি। তিন ছেলেমেয়ের লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালে বাউবির অধীনে নাটোর দিঘাপতিয়া এম. কে. কলেজে ভর্তি হন। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাদেক আলীর পায়ের দুটি হাড় ভেঙে যায়। সেই ভাঙা পা নিয়ে তিনি ক্রাচে ভর দিয়ে দিয়ে ৩য় থেকে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। সোমবার প্রকাশিত ২০২২ সালের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে তিনি উত্তীর্ণ হওয়ায় সাদেক আলী ও তার পরিবারসহ খুশি এলাকাবাসী।

সাদেক আলী প্রামানিকের ছেলে নাটোরের দিঘাপাতিয়া এমকে কলেজের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বাবা ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের কখনোই ছাড় দিতেন না। আমরা তিন ভাইবোনকেই তিনি লেখাপড়া করিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমতে এখন সবাই আমরা প্রতিষ্ঠিত। বাবা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়েছিলেন, তারপর আর্থিক অনটনের জন্য আর পড়তে পারেননি। তবে ২০২০ সালে বাবা ইচ্ছে প্রকাশ করেন ডিগ্রি কমপ্লিট করবেন। প্রথমে আমরা মনে করেছি যে তিনি এমনিতেই বলছেন। পরে তার ইচ্ছায় তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয়। আল্লাহর রহমতে তিনি পাসও করেছেন। বাবার এমন সাফল্যে আমরা ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই অত্যন্ত খুশি। আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।

সাদেক আলী প্রামানিক বলেন, আল্লাহর রহমতে ছোটবেলা থেকেই আমি মেধাবী ছিলাম। প্রত্যেক ক্লাসেই আমার রোল ১ ছিল। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পরে সেভাবে পড়াশোনা করা হয়নি। দীর্ঘ দিন চলে যায়। তবু কেন জানি মনে হচ্ছিল জীবনে কিছু একটা বাদ আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম ডিগ্রি পরীক্ষা দেব। পরীক্ষার ভেতর আমার পা ভেঙে যায়। সেভাবেই কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে পাস করেছি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমিন নেলী বলেন,আমরা নাটোর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। ৭৫ বছর বয়েসে স্নাতক পাস করা বিষয়টি সত্যিই অনুপ্রেরনার। আমরা আশা করছি,উনাকে দেখে সবাই শিখবে,বয়স কোন বাধা,ইচ্ছা শক্তি থাকলে,শত বাধা পেরিয়েও সাফল্য অর্জন সম্ভব। আমাদের নাটোর জেলা পুলিশের পক্ষ উনার জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

এমএস