বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ শুরু থেকেই তথ্যসমৃদ্ধ ও জনপ্রিয়। একই জনপ্রিয়তা ধরে রেখে তিন দশকেরও বেশি সময় পার করেছেন অনুষ্ঠানটি। সম্প্রতি অনুষ্ঠানটির প্রচারিত একটি পর্বের মাধ্যমে এর নির্মাতা হানিফ সংকেত আবারও প্রমাণ করলেন, ইত্যাদির বিকল্প একমাত্র ইত্যাদিই। এ পর্বটি ধারণ করা হয়েছিল বাগেরহাট জেলার মোংলা বন্দরে।
২০০৯ সাল পর্যন্ত ইউনেস্কো বাংলাদেশের তিনটি স্থানকে বিশ্ব-ঐতিহ্যস্থল হিসাবে ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে দুটিই হচ্ছে বাগেরহাটে। মসজিদ শহর বাগেরহাট বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যভুক্ত প্রত্নস্থল এবং সুন্দরবন বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্যভুক্ত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন।
এসব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো দারুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবারের ইত্যাদিতে। দেখানো হয়েছে হজরত খানজাহান এবং তার গড়া ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ, বিভিন্ন দীঘি, তার বসতভিটা এবং মাজার। খানজাহানের তৈরি দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাস্তার (৬০০ বছর আগে) সঙ্গে এখনকার তৈরি রাস্তার তুলনা করে দেখা গেছে পুরোনো এবং পাতলা হওয়া সত্ত্বেও তখনকার ইটগুলো কত অক্ষত। অনুষ্ঠানে সুন্দরবনের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানের ওপর কয়েকটি প্রতিবেদন ছিল বেশ তথ্যসমৃদ্ধ।
চিঠিপত্র বিভাগে রুমিছা বেগমের প্রতিবেদন এবং আর্থিক অনুদান, কুমিরের কামড়ে নিহত ঢাংমারী গ্রামের মোশারফ গাজীর দরিদ্র পরিবারকে অনুদানসহ প্রতিবেদনগুলো ছিল হৃদয়স্পর্শী। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনের নামে কিছু সাংবাদিকের রাজনৈতিক নেতাদের চাটুকারী করা, ঘুসখোর এবং হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করা, ঋণ করে টাকা ফেরত না দেওয়া, ব্যাংক ডাকাতসহ বাজারের দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ে নাট্যাংশ ছিল তীর্যক এবং উপভোগ্য। নানি-নাতির আলাপ এবারও ছিল উপভোগ্য।
বাগেরহাটকে নিয়ে রচিত শতাধিক শিক্ষার্থীর নৃত্যগীত, রাজিকের ম্যাজিক, নাসির ও সানজিদা রিমির গানও দর্শকরা উপভোগ করেছেন। দর্শক পর্বে লোক বাদ্যযন্ত্রনির্ভর সংগীত প্রতিযোগিতাটি আমাদের সংগীত শিকড়ের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। পৃথিবীর সর্বোচ্চ গিরিখাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ওপর হানিফ সংকেতের রিপোর্টিং দারুণ হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বরাবরের মতোই ইত্যাদি ছিল অনবদ্য।
কেকে