ঢাকা ০৩:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
শিক্ষার্থীদের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষন চালু করলো বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ১২০০ বস্তা চাল নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে: উপদেষ্টা আসিফ বাসে ওঠার সময় যাত্রীদের ছবি তুলে রাখা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় কমিটি হচ্ছে : আইন উপদেষ্টা ফারুকের মনোনয়ন বাতিল ও আমিনুলের মনোনয়ন কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট সেপ্টেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামবে : গভর্নর বিভিন্ন দেশের ভিসা বন্ধ হওয়ার জন্য দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীরাই দায়ী: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আমরা ক্ষমতা নেইনি, দায়িত্ব নিয়েছি: অর্থ উপদেষ্টা নতুন চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিশ্চয়তা চায় ইরান মনপুরায় ভিজিএফ চাউলের চুরি ধরা পরায় সাংবাদিকদের হুমকি ওয়ার্ড মেম্বারের

বাংলাদেশি পর্যটক নেই, খাঁ খাঁ করছে কলকাতার হোটেল-মার্কেট

ছবিঃ সংগৃহীত

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে তুলে এনেছে সেখানকার পরিস্থিতি।

সংবাদমাধ্যমটিকে কলকাতা হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ মালিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মনোতোষ সরকার বলেন, “জুলাই থেকে মার্কুইস স্ট্রিটে আমার হোটেলের ৩০ রুমের মধ্যে মাত্র চার থেকে পাঁচটিতে বাংলাদেশিরা থাকছেন। ছাত্র আন্দোলন ও শেখ হাসিনাকে হটানোর আগে ২৬ থেকে ২৮ রুমে বাংলাদেশি অতিথিরা থাকতেন।”

যেসব হোটেলে ১০ থেকে ১২টি রুম আছে সেগুলো অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ তাদের মাত্র এক বা দুটি রুম বুক হচ্ছে। মনোতোষ সরকার বলেন, “২০২১ সালে করোনার সময় ভ্রমণে বিধিনিষেধ থাকার সময় যে অবস্থা হয়েছিল এখন ঠিক একই পরিস্থিতি চলছে।”

চট্টগ্রামের রাজন বিশ্বাস, এমনই একটি খালি হোটেলে থাকছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, আগে যখন তিনি কলকাতায় যেতেন তখন বাংলাদেশি পর্যটকে হোটেলগুলো গমগম করত। কিন্তু ভারত সরকার বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

রাজন বলেছেন, “আমার আগেই ভিসা ছিল। তাই কলকাতায় এসেছি। কিন্তু যারা এখন ভিসার জন্য আবেদন করছেন, যদি এটি জরুরি মেডিকেল ভিসা না হয়, তাহলে তাদের ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। খুব সম্ভবত বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য ভারত চিন্তিত। এ কারণে ভিসা ইস্যুতে তারা কঠোর হয়ে গেছে।” রাজন জানিয়েছেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বর্তমান ভিসাগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এখন যে ১০-১৫ শতাংশ মানুষ ভারতে যাচ্ছেন সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে।

কলকাতার নিউমার্কেটে বাংলাদেশি পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আনাগোনা দেখা যায়। কলকাতার স্থানীয় মানুষের চেয়ে বাংলাদেশি পর্যটকরাই এখানে বেশি আসেন। কিন্তু এখন বাংলাদেশিরা না থাকায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা অনেকটাই আশাহত হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন যদি ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানে এমন কড়াকড়ি অব্যাহত রাখে এবং এটি কয়েক বছর চলে তাহলে তাদের এই ক্ষুদ্র ব্যবসা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।

কোকোনাট নামের একটি দোকান, তারা শুধুমাত্র বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে চকলেট, বাদাম, মশলা এবং কসমেটিকস বিক্রি করে থাকে। দোকানটির মালিক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, আগে যেখানে প্রতিদিন তাদের সাড়ে তিন লাখ রুপি বেচাবিক্রি হতো। সেটি কমে এখন মাত্র ৩৫ হাজার রুপিতে চলে এসেছে। যারা এখন তার দোকানে আসছেন তাদের প্রায় সবাই মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারতে গেছেন। কিন্তু নিউমার্কেট থেকে পণ্য কিনে ঢাকায় নিয়ে পণ্য বিক্রির যে ব্যবসাটি ছিল সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

অজয় শ, সেখানকার কসমেটিকসের দোকান রয়্যাল স্টোরের পঞ্চম প্রজন্মের মালিক। তিনি জানিয়েছেন, তার ১২৪ বছর পুরোনো দোকান যে শোচনীয় অবস্থায় পড়েছে এখানকার পুরো মার্কেটটি একই অবস্থায় পড়েছে।

তিনি বলেন, “২০০৮-০৯ সালে নিউমার্কেটে স্থানীয় ক্রেতার সংখ্যা একেবারে কমে যায়। ওই সময় থেকে মার্কেটটি বাংলাদেশিদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে। মার্কেটের প্রায় সব দোকান তখন তাদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী পণ্য বিক্রি শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন এবং ভিসা ইস্যু সংক্রান্ত ঝামেলার পর থেকে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। আমরা আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন বাংলাদেশি ক্রেতা পেতাম। যারা একেকজন গড়ে ১৫ হাজার রুপি খরচ করতেন। কিন্তু এখন আমরা দিনে পাঁচজন বাংলাদেশিও পাই না। আর তারা তাদের খরচের পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার রুপিতে নিয়ে গেছেন।”

নিহাদ সাজিদ/এমএস

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষন চালু করলো বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি

বাংলাদেশি পর্যটক নেই, খাঁ খাঁ করছে কলকাতার হোটেল-মার্কেট

আপডেট সময় : ০৭:৫৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে তুলে এনেছে সেখানকার পরিস্থিতি।

সংবাদমাধ্যমটিকে কলকাতা হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ মালিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মনোতোষ সরকার বলেন, “জুলাই থেকে মার্কুইস স্ট্রিটে আমার হোটেলের ৩০ রুমের মধ্যে মাত্র চার থেকে পাঁচটিতে বাংলাদেশিরা থাকছেন। ছাত্র আন্দোলন ও শেখ হাসিনাকে হটানোর আগে ২৬ থেকে ২৮ রুমে বাংলাদেশি অতিথিরা থাকতেন।”

যেসব হোটেলে ১০ থেকে ১২টি রুম আছে সেগুলো অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ তাদের মাত্র এক বা দুটি রুম বুক হচ্ছে। মনোতোষ সরকার বলেন, “২০২১ সালে করোনার সময় ভ্রমণে বিধিনিষেধ থাকার সময় যে অবস্থা হয়েছিল এখন ঠিক একই পরিস্থিতি চলছে।”

চট্টগ্রামের রাজন বিশ্বাস, এমনই একটি খালি হোটেলে থাকছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তিনি বলেন, আগে যখন তিনি কলকাতায় যেতেন তখন বাংলাদেশি পর্যটকে হোটেলগুলো গমগম করত। কিন্তু ভারত সরকার বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

রাজন বলেছেন, “আমার আগেই ভিসা ছিল। তাই কলকাতায় এসেছি। কিন্তু যারা এখন ভিসার জন্য আবেদন করছেন, যদি এটি জরুরি মেডিকেল ভিসা না হয়, তাহলে তাদের ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। খুব সম্ভবত বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য ভারত চিন্তিত। এ কারণে ভিসা ইস্যুতে তারা কঠোর হয়ে গেছে।” রাজন জানিয়েছেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বর্তমান ভিসাগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এখন যে ১০-১৫ শতাংশ মানুষ ভারতে যাচ্ছেন সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে।

কলকাতার নিউমার্কেটে বাংলাদেশি পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আনাগোনা দেখা যায়। কলকাতার স্থানীয় মানুষের চেয়ে বাংলাদেশি পর্যটকরাই এখানে বেশি আসেন। কিন্তু এখন বাংলাদেশিরা না থাকায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা অনেকটাই আশাহত হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন যদি ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানে এমন কড়াকড়ি অব্যাহত রাখে এবং এটি কয়েক বছর চলে তাহলে তাদের এই ক্ষুদ্র ব্যবসা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।

কোকোনাট নামের একটি দোকান, তারা শুধুমাত্র বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে চকলেট, বাদাম, মশলা এবং কসমেটিকস বিক্রি করে থাকে। দোকানটির মালিক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, আগে যেখানে প্রতিদিন তাদের সাড়ে তিন লাখ রুপি বেচাবিক্রি হতো। সেটি কমে এখন মাত্র ৩৫ হাজার রুপিতে চলে এসেছে। যারা এখন তার দোকানে আসছেন তাদের প্রায় সবাই মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারতে গেছেন। কিন্তু নিউমার্কেট থেকে পণ্য কিনে ঢাকায় নিয়ে পণ্য বিক্রির যে ব্যবসাটি ছিল সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

অজয় শ, সেখানকার কসমেটিকসের দোকান রয়্যাল স্টোরের পঞ্চম প্রজন্মের মালিক। তিনি জানিয়েছেন, তার ১২৪ বছর পুরোনো দোকান যে শোচনীয় অবস্থায় পড়েছে এখানকার পুরো মার্কেটটি একই অবস্থায় পড়েছে।

তিনি বলেন, “২০০৮-০৯ সালে নিউমার্কেটে স্থানীয় ক্রেতার সংখ্যা একেবারে কমে যায়। ওই সময় থেকে মার্কেটটি বাংলাদেশিদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে। মার্কেটের প্রায় সব দোকান তখন তাদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী পণ্য বিক্রি শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন এবং ভিসা ইস্যু সংক্রান্ত ঝামেলার পর থেকে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। আমরা আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন বাংলাদেশি ক্রেতা পেতাম। যারা একেকজন গড়ে ১৫ হাজার রুপি খরচ করতেন। কিন্তু এখন আমরা দিনে পাঁচজন বাংলাদেশিও পাই না। আর তারা তাদের খরচের পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার রুপিতে নিয়ে গেছেন।”

নিহাদ সাজিদ/এমএস