ঢাকা ০২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিশুদের হাতের লেখা ভালো করার কৌশল

আপনার শিশুসন্তান স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। কিন্তু লিখতে পারে না, সে জন্য বাবা-মায়ের অনেক দুশ্চিন্তা। ছোট হাতের লেখা লিখতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলছে। আপনার সন্তান লিখতে গেলেই জড়িয়ে পাকিয়ে যায় লেখা। আর পরীক্ষার সময়ে এমন জগাখিচুড়ি লেখা দেখতেই চান না শিক্ষকরা। তাতে নম্বরও কম আসে। এমনিতেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় অমনোযোগিতা নিয়ে বাবা-মায়েদের অভিযোগের শেষ নেই। তার ওপর যদি হাতের লেখাও খারাপ হয়, তাহলে তো কথাই নেই।

যদিও সুন্দর হাতের লেখা সবার হয় না। তবে চেষ্টা করতে তো কোনো ক্ষতি নেই। ছোট থেকেই যদি সঠিকভাবে আপনার শিশুসন্তানকে হাতের লেখায় অভ্যাস করা যায়, তাহলে লেখা হবে ঝরঝরে, স্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সুন্দর হাতের লেখা শেখানোর কয়েকটি কৌশল—

প্রতিদিন নিয়ম করে বাংলা ও ইংরেজি হাতের লেখা অভ্যাস করাতে হবে। অন্তত দুই পাতা করে হলেও লিখতে দিন আপনার শিশুসন্তানকে। ছুটির দিনে আরও বেশি। ভালো হয় যদি পাঠ্যবই থেকেই পাতা ধরে লিখতে দেওয়া হয়। এতে পড়াও হয়ে যায়, আবার লেখার অভ্যাসও তৈরি হয়। এই অভ্যাস থাকলে পরীক্ষার সময়েও দ্রুত লিখতে সুবিধা হবে আপনার সন্তানের।

শুরুতেই পেনসিল ও বলপেন ধরাও শিখতে হবে। শিসের ডগা থেকে অন্তত দেড়-দুই ইঞ্চি দূরে পেনসিল কিংবা পেন ধরা জরুরি। এতে লেখা ভালো হবে। আট কিংবা ৯ বছর বয়স পর্যন্ত পেনসিলে লেখা শেখাতে হবে। এরপর এগোনো যেতে পারে কলমের দিকে। তবে বিভিন্ন স্কুলে বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। অনেক স্কুল কলমের ব্যবহার অনেক পরে শুরু করে। তাই পেনসিল থেকে পেন ব্যবহার করার সময়ে ফাউন্টেন পেনের ব্যবহারই শুরুতে হওয়া উচিত, পরে জেল বা বলপেন ব্যবহার করাতে পারেন।

আর সাদা পাতায় দুটি শব্দের মাঝে এবং দুটি লাইনের মাঝে পর্যাপ্ত ফাঁক রেখে লিখলে অপটু হাতের লেখাও পাঠযোগ্য হয়। এ ফাঁকটুকু কীভাবে রাখতে হবে এবং কতটা, তা শেখাতে হবে আপনার সন্তানকে।

আর হ্যাঁ, লেখার সময়ে লাইন যেন সোজা হয়, তা নিয়মে পরিণত করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। আর হাতের লেখা সুন্দর করার সেটিও একটি কৌশল। একটি গোটা লাইন লেখার সময়ে, তার অক্ষরগুলো এলোমেলো থাকলে ও লাইন এঁকেবেঁকে চললে, লেখা দেখতে খুবই অপরিচ্ছন্ন এবং খারাপ দেখাবে। তাই লেখার সময়ে প্রতিটি অক্ষর যেন সমান মাপের হয় ও লাইন সোজা থাকে, তা খেয়াল রাখা জরুরি। প্রয়োজনে মার্জিন ধরে লেখার অভ্যাস করাতে হবে।

সবসময় মনে রাখবেন— ভাষার মতোই লেখারও ছন্দ আছে। অক্ষর ছন্দ। সেই ছন্দে হাতের লেখাকে বাঁধতে গেলে শুরু করতে হবে প্রথম থেকেই। শিশু যখন প্রথম অক্ষর লেখা শুরু করে, তখন থেকেই বাংলা স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণ হোক কিংবা ইংরেজি অক্ষর— সবই স্পষ্ট করে লেখা শেখাতে হবে। অনেকে নিজেই হয়তো অক্ষরগুলো পেঁচিয়ে ও বিকৃত করে লিখে থাকে। তাই ভুলভ্রান্তি এড়াতে নিজে আগে অক্ষর ভালো করে দেখে ও জেনে তার পরে লেখা শেখাতে হবে।

মনে রাখতে হবে, একটি শব্দের প্রতিটি অক্ষরই যেন স্পষ্ট হয়। বাংলা শব্দ মাত্রা দিয়ে লেখা হয়, কিন্তু ইংরেজি হলে প্রতিটি অ্যালফাবেট পর পর জুড়ে শব্দ লেখার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে অক্ষর যেন বিকৃত না হয়ে যায়। অনেক সময়েই শিশুরা ছোট হাতের ও বড় হাতের অক্ষর গুলিয়ে ফেলে, সেগুলো যত্নসহকারে বসিয়ে লেখাতে হবে।

ইংরেজির জন্য শুরুর দিকে ফোর লাইনার পাতাই যথেষ্ট। হাতের লেখা ভালো হতে শুরু করলে তারপরে সিঙ্গল রুলড পেপার এবং পরে একেবারে সাদা পাতায় লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

কেকে

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

শিশুদের হাতের লেখা ভালো করার কৌশল

আপডেট সময় : ১০:৪৪:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

আপনার শিশুসন্তান স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। কিন্তু লিখতে পারে না, সে জন্য বাবা-মায়ের অনেক দুশ্চিন্তা। ছোট হাতের লেখা লিখতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলছে। আপনার সন্তান লিখতে গেলেই জড়িয়ে পাকিয়ে যায় লেখা। আর পরীক্ষার সময়ে এমন জগাখিচুড়ি লেখা দেখতেই চান না শিক্ষকরা। তাতে নম্বরও কম আসে। এমনিতেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় অমনোযোগিতা নিয়ে বাবা-মায়েদের অভিযোগের শেষ নেই। তার ওপর যদি হাতের লেখাও খারাপ হয়, তাহলে তো কথাই নেই।

যদিও সুন্দর হাতের লেখা সবার হয় না। তবে চেষ্টা করতে তো কোনো ক্ষতি নেই। ছোট থেকেই যদি সঠিকভাবে আপনার শিশুসন্তানকে হাতের লেখায় অভ্যাস করা যায়, তাহলে লেখা হবে ঝরঝরে, স্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সুন্দর হাতের লেখা শেখানোর কয়েকটি কৌশল—

প্রতিদিন নিয়ম করে বাংলা ও ইংরেজি হাতের লেখা অভ্যাস করাতে হবে। অন্তত দুই পাতা করে হলেও লিখতে দিন আপনার শিশুসন্তানকে। ছুটির দিনে আরও বেশি। ভালো হয় যদি পাঠ্যবই থেকেই পাতা ধরে লিখতে দেওয়া হয়। এতে পড়াও হয়ে যায়, আবার লেখার অভ্যাসও তৈরি হয়। এই অভ্যাস থাকলে পরীক্ষার সময়েও দ্রুত লিখতে সুবিধা হবে আপনার সন্তানের।

শুরুতেই পেনসিল ও বলপেন ধরাও শিখতে হবে। শিসের ডগা থেকে অন্তত দেড়-দুই ইঞ্চি দূরে পেনসিল কিংবা পেন ধরা জরুরি। এতে লেখা ভালো হবে। আট কিংবা ৯ বছর বয়স পর্যন্ত পেনসিলে লেখা শেখাতে হবে। এরপর এগোনো যেতে পারে কলমের দিকে। তবে বিভিন্ন স্কুলে বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। অনেক স্কুল কলমের ব্যবহার অনেক পরে শুরু করে। তাই পেনসিল থেকে পেন ব্যবহার করার সময়ে ফাউন্টেন পেনের ব্যবহারই শুরুতে হওয়া উচিত, পরে জেল বা বলপেন ব্যবহার করাতে পারেন।

আর সাদা পাতায় দুটি শব্দের মাঝে এবং দুটি লাইনের মাঝে পর্যাপ্ত ফাঁক রেখে লিখলে অপটু হাতের লেখাও পাঠযোগ্য হয়। এ ফাঁকটুকু কীভাবে রাখতে হবে এবং কতটা, তা শেখাতে হবে আপনার সন্তানকে।

আর হ্যাঁ, লেখার সময়ে লাইন যেন সোজা হয়, তা নিয়মে পরিণত করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। আর হাতের লেখা সুন্দর করার সেটিও একটি কৌশল। একটি গোটা লাইন লেখার সময়ে, তার অক্ষরগুলো এলোমেলো থাকলে ও লাইন এঁকেবেঁকে চললে, লেখা দেখতে খুবই অপরিচ্ছন্ন এবং খারাপ দেখাবে। তাই লেখার সময়ে প্রতিটি অক্ষর যেন সমান মাপের হয় ও লাইন সোজা থাকে, তা খেয়াল রাখা জরুরি। প্রয়োজনে মার্জিন ধরে লেখার অভ্যাস করাতে হবে।

সবসময় মনে রাখবেন— ভাষার মতোই লেখারও ছন্দ আছে। অক্ষর ছন্দ। সেই ছন্দে হাতের লেখাকে বাঁধতে গেলে শুরু করতে হবে প্রথম থেকেই। শিশু যখন প্রথম অক্ষর লেখা শুরু করে, তখন থেকেই বাংলা স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণ হোক কিংবা ইংরেজি অক্ষর— সবই স্পষ্ট করে লেখা শেখাতে হবে। অনেকে নিজেই হয়তো অক্ষরগুলো পেঁচিয়ে ও বিকৃত করে লিখে থাকে। তাই ভুলভ্রান্তি এড়াতে নিজে আগে অক্ষর ভালো করে দেখে ও জেনে তার পরে লেখা শেখাতে হবে।

মনে রাখতে হবে, একটি শব্দের প্রতিটি অক্ষরই যেন স্পষ্ট হয়। বাংলা শব্দ মাত্রা দিয়ে লেখা হয়, কিন্তু ইংরেজি হলে প্রতিটি অ্যালফাবেট পর পর জুড়ে শব্দ লেখার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে অক্ষর যেন বিকৃত না হয়ে যায়। অনেক সময়েই শিশুরা ছোট হাতের ও বড় হাতের অক্ষর গুলিয়ে ফেলে, সেগুলো যত্নসহকারে বসিয়ে লেখাতে হবে।

ইংরেজির জন্য শুরুর দিকে ফোর লাইনার পাতাই যথেষ্ট। হাতের লেখা ভালো হতে শুরু করলে তারপরে সিঙ্গল রুলড পেপার এবং পরে একেবারে সাদা পাতায় লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

কেকে