ঢাকা ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজস্ব অধ্যাদেশে চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে: জ্বালানি উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সম্প্রতি জারি করা রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ প্রণয়নের সময় ‘চতুরতার আশ্রয়’ নেওয়া হয়েছিল। এই অধ্যাদেশটি সংশোধন করা হবে এবং এর মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডার ও শুল্ক ও কর ক্যাডারের কোনো আধিপত্য থাকবে না।

রাজধানীর সচিবালয়ে রোববার (১৩ জুলাই) বিদ্যুৎ বিভাগের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, এই অধ্যাদেশটি সংশোধন করা হবে। এই দুই বিভাগে প্রশাসন ক্যাডারের যেমন আধিপত্য থাকবে না, তেমনি শুল্ক ও কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আধিপত্য থাকবে না।

রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদ ও ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আলাদা একটি নীতিমালার পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সচিব পদে ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

গত ১২ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগে পৃথক করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যা নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করেন। ফাওজুল কবির খান জানান, এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের দ্বন্দ্বের কারণে।

এনবিআর বিলুপ্তি ও নতুন কাঠামো

তিনি বলেন, এনবিআর থাকবে না। প্রতিষ্ঠানটির নাম শুনলে মানুষ অট্টহাসি দেয়। কেন দেয়, সেটা আপনারা সবাই জানেন। এই নাম না থাকলেই ভালো। নতুন রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি শুল্ক ও কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও কোনো খবরদারি থাকবে না।

সচিব পদ ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হবে এবং যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

উপদেষ্টা পরিষদের ভুল ও কমিটি গঠন

উপদেষ্টা পরিষদে কীভাবে এই অধ্যাদেশ পাস হলো- এমন এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা ভবিষ্যৎ দেখতে পারি না। আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ জন্যই সরকার পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে। সবার ভুল হয়। আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা সেটা সংশোধন করছি।

এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন ও আস্থাহীনতা

এনবিআরের আন্দোলন ঠেকাতে দুদককে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান দৃঢ়ভাবে জানান, দুদককে মোটেই ব্যবহার করা হয়নি এবং এই প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছিল। তিনি বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের আচরণ এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। যদি তারা নির্দোষ হন, দুদক তাদের দায়মুক্তি দেবে।

কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, কর্মকর্তারা সরকারের আস্থা হারিয়েছেন। তাদের আচরণের মাধ্যমে এ আস্থা হারিয়েছে। এ আস্থা ফিরিয়ে আনতে তাদের রাজস্ব আহরণের গতি বাড়াতে হবে।

সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, তারা কেউ শিশু নয়। আন্দোলনের শুরুর দিকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তারা দুই মাস আন্দোলন করেছে। এটা খাতুনগঞ্জের আড়ত নাকি? সবাই কাজকর্ম ফেলে আন্দোলনে নেমেছে। ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এখন তাদের উচিত হবে, সরকারের হারিয়ে যাওয়া আস্থা ফেরাতে। এটা তো ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নয়।

ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, তারা (এনবিআর কর্মকর্তা–কর্মচারী) রাজস্ব আদায়ে বাধা দিয়েছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত করতে আন্দোলনের নামে তারা সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। সরকার অপরিসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন দ্রুত অর্থ উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রাজস্ব আহরণের গতি কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব দেখতে আমরা মাঠপর্যায় পরিদর্শনে যাব। আগে কী সেবা দিয়েছিলেন, এখন কী সেবা দেওয়া হচ্ছে এবং রাজস্ব আহরণের গতি কেমন, তা দেখতে যাব।

পাল্টা শুল্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কহার নির্ধারণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা অন্ধকারে রয়েছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাওজুল কবির খান বলেন, ব্যবসায়ীদের অন্ধকারে থাকার কোনো সুযোগ নেই। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা বাণিজ্য আলোচনার চেয়েও ব্যাপক। শুধু শুল্ক নয়, সেখানে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্য দেশের সঙ্গে আপনি কীভাবে সম্পর্ক রাখছেন, সেটাও তারা দেখছে। এই নিয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক করা হচ্ছে। সেটাও আলোচনার মধ্যে রয়েছে। শুধু শুল্ক নয়, অশুল্ক বাধা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজস্ব অধ্যাদেশে চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে: জ্বালানি উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৮:৪১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সম্প্রতি জারি করা রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ প্রণয়নের সময় ‘চতুরতার আশ্রয়’ নেওয়া হয়েছিল। এই অধ্যাদেশটি সংশোধন করা হবে এবং এর মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডার ও শুল্ক ও কর ক্যাডারের কোনো আধিপত্য থাকবে না।

রাজধানীর সচিবালয়ে রোববার (১৩ জুলাই) বিদ্যুৎ বিভাগের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, এই অধ্যাদেশটি সংশোধন করা হবে। এই দুই বিভাগে প্রশাসন ক্যাডারের যেমন আধিপত্য থাকবে না, তেমনি শুল্ক ও কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আধিপত্য থাকবে না।

রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদ ও ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আলাদা একটি নীতিমালার পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সচিব পদে ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

গত ১২ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগে পৃথক করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়, যা নিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করেন। ফাওজুল কবির খান জানান, এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের দ্বন্দ্বের কারণে।

এনবিআর বিলুপ্তি ও নতুন কাঠামো

তিনি বলেন, এনবিআর থাকবে না। প্রতিষ্ঠানটির নাম শুনলে মানুষ অট্টহাসি দেয়। কেন দেয়, সেটা আপনারা সবাই জানেন। এই নাম না থাকলেই ভালো। নতুন রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি শুল্ক ও কর ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও কোনো খবরদারি থাকবে না।

সচিব পদ ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হবে এবং যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

উপদেষ্টা পরিষদের ভুল ও কমিটি গঠন

উপদেষ্টা পরিষদে কীভাবে এই অধ্যাদেশ পাস হলো- এমন এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা ভবিষ্যৎ দেখতে পারি না। আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ জন্যই সরকার পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে। সবার ভুল হয়। আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা সেটা সংশোধন করছি।

এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন ও আস্থাহীনতা

এনবিআরের আন্দোলন ঠেকাতে দুদককে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান দৃঢ়ভাবে জানান, দুদককে মোটেই ব্যবহার করা হয়নি এবং এই প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছিল। তিনি বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের আচরণ এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। যদি তারা নির্দোষ হন, দুদক তাদের দায়মুক্তি দেবে।

কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, কর্মকর্তারা সরকারের আস্থা হারিয়েছেন। তাদের আচরণের মাধ্যমে এ আস্থা হারিয়েছে। এ আস্থা ফিরিয়ে আনতে তাদের রাজস্ব আহরণের গতি বাড়াতে হবে।

সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, তারা কেউ শিশু নয়। আন্দোলনের শুরুর দিকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তারা দুই মাস আন্দোলন করেছে। এটা খাতুনগঞ্জের আড়ত নাকি? সবাই কাজকর্ম ফেলে আন্দোলনে নেমেছে। ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এখন তাদের উচিত হবে, সরকারের হারিয়ে যাওয়া আস্থা ফেরাতে। এটা তো ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নয়।

ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, তারা (এনবিআর কর্মকর্তা–কর্মচারী) রাজস্ব আদায়ে বাধা দিয়েছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত করতে আন্দোলনের নামে তারা সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। সরকার অপরিসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন দ্রুত অর্থ উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

রাজস্ব আহরণের গতি কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব দেখতে আমরা মাঠপর্যায় পরিদর্শনে যাব। আগে কী সেবা দিয়েছিলেন, এখন কী সেবা দেওয়া হচ্ছে এবং রাজস্ব আহরণের গতি কেমন, তা দেখতে যাব।

পাল্টা শুল্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কহার নির্ধারণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা অন্ধকারে রয়েছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাওজুল কবির খান বলেন, ব্যবসায়ীদের অন্ধকারে থাকার কোনো সুযোগ নেই। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা বাণিজ্য আলোচনার চেয়েও ব্যাপক। শুধু শুল্ক নয়, সেখানে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্য দেশের সঙ্গে আপনি কীভাবে সম্পর্ক রাখছেন, সেটাও তারা দেখছে। এই নিয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক করা হচ্ছে। সেটাও আলোচনার মধ্যে রয়েছে। শুধু শুল্ক নয়, অশুল্ক বাধা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।