ঢাকা ০২:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না : হেফাজতে আমির

দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় হেফাজতের নেতারা।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যার সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় কাঠামো ইসলামি মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই দেশের সংস্কৃতি, পরিবারব্যবস্থা এবং নৈতিক রীতিনীতিকে অক্ষুণ্ন রাখা আমাদের ধর্মীয় ও নাগরিক দায়িত্ব। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কার্যালয় স্থাপনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করছি।

শনিবার (০৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘মানবাধিকারের’ নামে ইসলামি শরিয়াহ্, পারিবারিক আইন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা করেছে। এসব হস্তক্ষেপ একদিকে যেমন জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত, অন্যদিকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিরও পরিপন্থি। তাই বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না।

হেফাজতের আমির আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা মানুষকে নারী ও পুরুষ- দুই স্বতন্ত্র পরিচয়ে সৃষ্টি করেছেন। ইসলাম একমাত্র বৈধ ও স্বীকৃত বিবাহের পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে পুরুষ ও নারীর মধ্যে। নারীর সঙ্গে নারীর কিংবা পুরুষের সঙ্গে পুরুষের তথাকথিত সমকামিতা ইসলাম এবং প্রকৃতি উভয়ের পরিপন্থি। এসব বিকৃত পশ্চিমা ধারণা সমাজে অবাধ যৌনাচার, পারিবারিক অবক্ষয় ও নৈতিক ধ্বংস ডেকে আনে। শাপলা চত্বরে ও চব্বিশের ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রুহের মাগফিরাত, আহতদের সুস্থতা কামনায় দেশব্যাপী দোয়া-মাহফিল ও আলোচনার অংশ হিসেবে রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মিলনায়তনে এ দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হেফাজতের আমির মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হামিদ (পীরসাহেব মধুপুর), মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, আহমদ আলী কাসেমী, খুরশিদ আলম কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মনির হোসাইন কাসেমী, খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, আতাউল্লাহ আমিন, মুফতি আজহারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক বশিরুল্লাহ, জাবের কাসেমী, জাকির হোসাইন কাসেমী, কামাল উদ্দিন, ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সালাহ উদ্দিন ও দপ্তর সম্পাদক আফসার মাহমুদ।

এ সময় মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, প্রকৃত মানবাধিকার মানে হলো প্রত্যেক মানুষকে তার প্রকৃতি ও ধর্ম অনুযায়ী সম্মান দেওয়া। নারীর সম্মান নারী হিসেবেই রক্ষা করতে হবে; পুরুষের মর্যাদা ও দায়িত্বও পুরুষ হিসেবেই সংরক্ষণ করতে হবে। ইসলামই নারীকে প্রকৃত মর্যাদা দিয়েছে- মা, স্ত্রী, মেয়ে ও বোন হিসেবে। মানবাধিকারের নামে যদি ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোতে বিদেশি সংস্কৃতির চাপানো নিয়ম চালু করার চেষ্টা করা হয়, তবে ইমানদার জনতা তা কখনো মেনে নেবে না। তিনি জাতীয় স্বার্থ, সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে রক্ষার স্বার্থে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন এবং বিদেশি দূত নিযুক্তির চুক্তি বাতিল করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

মামুনুল হক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বাংলাদেশের ইমানদার তাওহিদি জনতা দেশের স্বাধীনতা, ইসলামি মূল্যবোধ ও সামাজিক নৈতিকতার বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামতে আমরা বাধ্য হব ইনশাআল্লাহ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত, বৈষম্যহীন ও স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন- যেখানে কোনো বিদেশি আধিপত্য থাকবে না, থাকবে না রাজনৈতিক নিপীড়ন। এই শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের উচিত ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা। ব্যর্থ হলে ইতিহাস ও জনতার কাঠগড়ায় তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

সভাপতির ভাষণে মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব বলেন, এখনো কিছু গোষ্ঠী যারা দেশের স্বাধীনতা ও ইসলামবিরোধী- তারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে শত্রুরা সক্রিয়। এদের রুখতে জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। যারা অভ্যন্তর থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করবে ও শত্রুর সঙ্গে হাত মেলাবে, জনতার ঐক্য তাদের প্রতিহত করবে ইনশাআল্লাহ।

কেকে

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না : হেফাজতে আমির

আপডেট সময় : ০৯:৫০:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যার সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় কাঠামো ইসলামি মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই দেশের সংস্কৃতি, পরিবারব্যবস্থা এবং নৈতিক রীতিনীতিকে অক্ষুণ্ন রাখা আমাদের ধর্মীয় ও নাগরিক দায়িত্ব। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কার্যালয় স্থাপনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করছি।

শনিবার (০৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘মানবাধিকারের’ নামে ইসলামি শরিয়াহ্, পারিবারিক আইন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা করেছে। এসব হস্তক্ষেপ একদিকে যেমন জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত, অন্যদিকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিরও পরিপন্থি। তাই বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না।

হেফাজতের আমির আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা মানুষকে নারী ও পুরুষ- দুই স্বতন্ত্র পরিচয়ে সৃষ্টি করেছেন। ইসলাম একমাত্র বৈধ ও স্বীকৃত বিবাহের পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে পুরুষ ও নারীর মধ্যে। নারীর সঙ্গে নারীর কিংবা পুরুষের সঙ্গে পুরুষের তথাকথিত সমকামিতা ইসলাম এবং প্রকৃতি উভয়ের পরিপন্থি। এসব বিকৃত পশ্চিমা ধারণা সমাজে অবাধ যৌনাচার, পারিবারিক অবক্ষয় ও নৈতিক ধ্বংস ডেকে আনে। শাপলা চত্বরে ও চব্বিশের ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রুহের মাগফিরাত, আহতদের সুস্থতা কামনায় দেশব্যাপী দোয়া-মাহফিল ও আলোচনার অংশ হিসেবে রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মিলনায়তনে এ দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হেফাজতের আমির মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হামিদ (পীরসাহেব মধুপুর), মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, আহমদ আলী কাসেমী, খুরশিদ আলম কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মনির হোসাইন কাসেমী, খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, আতাউল্লাহ আমিন, মুফতি আজহারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক বশিরুল্লাহ, জাবের কাসেমী, জাকির হোসাইন কাসেমী, কামাল উদ্দিন, ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সালাহ উদ্দিন ও দপ্তর সম্পাদক আফসার মাহমুদ।

এ সময় মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, প্রকৃত মানবাধিকার মানে হলো প্রত্যেক মানুষকে তার প্রকৃতি ও ধর্ম অনুযায়ী সম্মান দেওয়া। নারীর সম্মান নারী হিসেবেই রক্ষা করতে হবে; পুরুষের মর্যাদা ও দায়িত্বও পুরুষ হিসেবেই সংরক্ষণ করতে হবে। ইসলামই নারীকে প্রকৃত মর্যাদা দিয়েছে- মা, স্ত্রী, মেয়ে ও বোন হিসেবে। মানবাধিকারের নামে যদি ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোতে বিদেশি সংস্কৃতির চাপানো নিয়ম চালু করার চেষ্টা করা হয়, তবে ইমানদার জনতা তা কখনো মেনে নেবে না। তিনি জাতীয় স্বার্থ, সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে রক্ষার স্বার্থে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন এবং বিদেশি দূত নিযুক্তির চুক্তি বাতিল করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

মামুনুল হক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বাংলাদেশের ইমানদার তাওহিদি জনতা দেশের স্বাধীনতা, ইসলামি মূল্যবোধ ও সামাজিক নৈতিকতার বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামতে আমরা বাধ্য হব ইনশাআল্লাহ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত, বৈষম্যহীন ও স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন- যেখানে কোনো বিদেশি আধিপত্য থাকবে না, থাকবে না রাজনৈতিক নিপীড়ন। এই শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের উচিত ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা। ব্যর্থ হলে ইতিহাস ও জনতার কাঠগড়ায় তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

সভাপতির ভাষণে মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব বলেন, এখনো কিছু গোষ্ঠী যারা দেশের স্বাধীনতা ও ইসলামবিরোধী- তারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে শত্রুরা সক্রিয়। এদের রুখতে জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। যারা অভ্যন্তর থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করবে ও শত্রুর সঙ্গে হাত মেলাবে, জনতার ঐক্য তাদের প্রতিহত করবে ইনশাআল্লাহ।

কেকে