“জলবায়ু পরিবর্তন ” এর ভয়াবহতা অপূরনীয়। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ হারাচ্ছে তার চিরপরিচিত আবাসস্থল, এই জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে।
নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন। বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। গলে যাচ্ছে হিমালয়ের বরফ। কোথাও সৃষ্টি হচ্ছে মরুভূমি, কোথাওবা প্লাবিত হচ্ছে সমতল ভুমি। হিমালয়ের এভারেস্টসহ বিশ্বের উঁচু পর্বতমালার চূড়ায় জমে থাকা বরফ ও তুষার, উত্তর ও দক্ষিণ মেরু বা আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিকার জমাট বাঁধা বরফ এখন গলতে শুরু করেছে। লাইভ সায়েন্সের অনলাইন সংস্করণে সম্প্রতি জো ফেলানের একটি তাৎপর্যপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক সাংবাদিক ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকস ম্যাগাজিনেও লেখেন। তিনি বলেন, সমুদ্রতলের উচ্চতা খুব দ্রুত বাড়ছে। উচ্চতা বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমসফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) এক হিসাব অনুযায়ী, গত শতাব্দীতে বেড়েছে প্রতিবছর গড়ে ০.০৬ ইঞ্চি। আর এখন প্রতিবছর গড় বৃদ্ধির হার ০.১৪ ইঞ্চি। এই সংস্থার অনুমান, আগামী শতাব্দীর শুরুতে পানির উচ্চতা দুই হাজার সালে যা ছিল, তার চেয়ে হয়তো এক ফুট বাড়বে। অন্যদিকে ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের এক হিসাব অনুযায়ী, ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ১৬ থেকে ২৫ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়তে পারে। মনে হয় সমুদ্রের পানির উচ্চতা মাত্র এক বা দেড় ফুট বাড়লে এমন আর কী সমস্যা হবে। কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বুঝব, আমাদের দেশের উকূলে এখনই কী সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
ইতিমধ্যে শুধু আমাদের দেশেই নয়, অন্য অনেক দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বনভূমি ও আবাসস্থল পানির নিচে চলে যাচ্ছে। দেশের ভেতরেই সৃষ্টি হচ্ছে স্থানীয় উদ্বাস্তু। নেচার কমিউনিকেশনসের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে, ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব মহাদেশ মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই বিশাল সমস্যার চাপ পড়বে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আমরা হয়তো ভুলে যাইনি, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের আগমুহূর্তে ২০০৯ সালের ১৭ অক্টোবর বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ সমুদ্রের পানির নিচে টেবিল-চেয়ার নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের সভা করেছিলেন। সেটা ছিল বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের বিরুদ্ধে এক অভিনব প্রতিবাদ।
মালদ্বীপ হলো ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জ। এটা সমুদ্রের পানির চেয়ে ৭ ফুট উচ্চতায়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে মালদ্বীপের মতো আরও অনেক দেশের উপকূলীয় অঞ্চল সাগরে তলিয়ে যেতে পারে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নীতি নির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য মন্ত্রীরা স্কুবা-গিয়ার পরে সাগরের পানির নিচে মন্ত্রিপরিষদের সভা করেন। সে সময় এ ঘটনা সবার মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ওই সময় প্রেসিডেন্ট নাশিদ বলেছিলেন, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ সমুদ্রের মাত্র ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে তাদের অনেকের জীবনযাত্রা বিপন্ন হবে।
এই শতাব্দীর শেষ দিকে আমেরিকা, ইউরোপ ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর এক বিরাট অংশের উপকূল সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট ঝুঁকিতে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারন মানুষের অসচেতনতা। মনুষ প্রতিনিয়ত দুষণ করেই চলেছে পরিবেশের। গাছ কাটছে ইচ্ছামতো যার ফলে পরিবেশ হারাচ্ছে তার ভারসাম্য, ঘটছে জলবায়ুর পরিবর্তন। বাতাসে বাড়ছে কর্বন ডাই-অক্সাইড সহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস। যার ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তর।
বিভিন্ন গবেষণার তথ্যানুযায়ী ধারণা করা হয় যে, ওজোনস্তরের ক্ষয়ের ফলে যে অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে তা ত্বকের ক্যানসার, ছানি, উদ্ভিদজগতের ক্ষতি, প্ল্যাঙ্কটন হ্রাস, সমুদ্রের জীবের হ্রাস ইত্যাদির সমস্যার কারণ হতে পারে। পৃথিবী এগিয়ে চলছে হুমকির মুখে। আমরা হয়েছি এক বিরাট চ্যালেন্জের মুখোমুখি। যেটা মোকাবিলা করার অঙ্গীকার নিতে হবে আমাদের সবার। জনসাধারণের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে সচেতনতা। গ্রহণ করতে হবে কর্যকারী পদক্ষেপ। আগামী পৃথিবীকে গড়ে তুলতে হবে বাসযোগ্য আবাসস্থল হিসেবে। এ দায়িত্ব আমাদের সকলের।
ইয়ামিন