যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া জটিল এবং বেশ কয়েকটি ধাপে বিভক্ত। এর মধ্যে প্রার্থী বাছাই, প্রাইমারি ও ককাস নির্বাচন, প্রচারণা এবং ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো অন্তর্ভুক্ত।
১. প্রার্থী বাছাই ও প্রস্তুতি
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য একজন যোগ্য নাগরিককে অবশ্যই কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়সী হতে হবে এবং কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা হতে হবে। এছাড়া, তাকে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী নাগরিক হতে হবে।
প্রার্থীর ঘোষণা
প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হলো দলের প্রার্থীর ঘোষণা। প্রার্থী নিজেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন, যা সাধারণত কয়েক বছর আগে থেকেই প্রচার এবং আর্থিক সমর্থন সংগ্রহের মাধ্যমে শুরু হয়। বড় দুটি দল—ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান—এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। তাছাড়া তৃতীয় পক্ষের প্রার্থীরাও কখনো কখনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
২. প্রাইমারি ও ককাস নির্বাচন
প্রার্থীরা প্রতিটি রাজ্যে দলীয় সমর্থন লাভের জন্য অংশগ্রহণ করেন প্রাইমারি এবং ককাসে।
প্রাইমারি নির্বাচন
প্রাইমারি হলো সরাসরি ভোট, যেখানে দলের নিবন্ধিত ভোটাররা প্রার্থীকে ভোট দেন। এটি দুই ধরনের হতে পারে:
ক্লোজড প্রাইমারি: যেখানে কেবল দলের নিবন্ধিত সদস্যরাই ভোট দিতে পারেন।
ওপেন প্রাইমারি: যেখানে যে কেউ ভোট দিতে পারে, এমনকি তারা অন্য দলের সদস্য হলেও।
ককাস নির্বাচন
ককাস হলো একটি বৈঠকভিত্তিক প্রক্রিয়া। এতে দলের সদস্যরা নির্দিষ্ট সময়ে বৈঠকে মিলিত হন এবং আলোচনা করে প্রার্থী বাছাই করেন। ককাস সাধারণত সংক্ষিপ্ত আকারে অনুষ্ঠিত হয় এবং বেশ কয়েকটি স্তর পেরিয়ে দলীয় প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়।
৩. ন্যাশনাল পার্টি কনভেনশন
প্রাইমারি ও ককাস শেষ হলে প্রতিটি দল একটি ন্যাশনাল কনভেনশন আয়োজন করে। এতে দলের প্রতিনিধিরা তাদের ভোটারদের হয়ে চূড়ান্ত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচিত করে।
এই সময়ে, প্রার্থীরা সহ-প্রার্থী (ভাইস প্রেসিডেন্ট) বাছাই করেন এবং তাদের চূড়ান্ত নির্বাচনী প্রতীক বা লক্ষ্য উপস্থাপন করেন।
৪. সাধারণ নির্বাচন প্রচারণা
ন্যাশনাল কনভেনশনের পরে শুরু হয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের বড় প্রচারণা। এই সময়ে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা দেশজুড়ে ভ্রমণ করে সমাবেশ, বিতর্ক, এবং প্রচারাভিযানের মাধ্যমে ভোটারদের সাথে যোগাযোগ করেন। গণমাধ্যম, বিজ্ঞাপন, এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চলতে থাকে। বিতর্কগুলো ভোটারদের সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. সাধারণ নির্বাচন
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাধারণ ভোট গ্রহণ সাধারণত প্রতি চার বছরে নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত হয়। ভোটাররা এখানে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেন, তবে তারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। বরং তারা নির্বাচনী কলেজে প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন, যারা প্রেসিডেন্টের জন্য ভোট দেন।
৬. ইলেক্টোরাল কলেজ সিস্টেম
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি জনপ্রিয় ভোটের মাধ্যমে হয় না। দেশটিতে একটি “ইলেক্টোরাল কলেজ” ব্যবস্থা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি রাজ্যের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে, যা সাধারণত ওই রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে এবং একটি প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট হতে হলে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হয়।
৭. ইলেক্টোরাল ভোটিং প্রক্রিয়া
প্রতিটি রাজ্যের ইলেক্টর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় কংগ্রেসে সেই রাজ্যের প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে। এটি হলো সেই রাজ্যের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য এবং সিনেটরের সংখ্যার সমষ্টি।
সাধারণত, প্রতিটি রাজ্য তার অধিকাংশ জনপ্রিয় ভোট যে প্রার্থী পান, তার পক্ষেই সব ইলেক্টোরাল ভোট দেয় (উইনার-টেকস-অল সিস্টেম), তবে মেইন ও নেব্রাস্কা আংশিকভাবে এ নিয়মের বাইরে।
৮. ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটদান
ডিসেম্বর মাসে নির্বাচিত ইলেক্টররা রাজধানীতে এসে ইলেক্টোরাল ভোট প্রদান করে। তাদের দেওয়া ভোট গণনা করা হয় কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশনে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। প্রার্থী ২৭০ বা তার বেশি ইলেক্টোরাল ভোট পেলে তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
৯. শপথ গ্রহণ
নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শুরু হয় জানুয়ারি ২০ তারিখে, যেদিন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন। এই দিনটি “ইনাগুরেশন ডে” নামে পরিচিত। প্রেসিডেন্ট শপথবাক্য পাঠ করেন এবং এর মাধ্যমে তার মেয়াদকালের শুরু হয়।
এভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া বেশ কয়েকটি স্তরের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়, যেখানে জনপ্রিয় ভোটের পাশাপাশি ইলেক্টোরাল কলেজের গুরুত্ব বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।
নিহাদ সাজিদ