ননীফল দেখতে সবুজ গায়ে দাগ আছে। সারাবছর ফল ধরে। শরীরের যেকোন ব্যাথা নিরাময়ে এ ফলের উপকারিতা পেয়ে অনেকে একে ব্যাথানাশক ফল বলে। বিশেষ করে এ মহামারি করোনাকালে শরীরে ভিটামিন জিংক তৈরিতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।
ক্যান্সারের প্রতিরোধক ননী ফলের ব্যাখা:
বিজ্ঞানীদের মতে -এই আশ্চর্য ফলটি ক্যান্সারসহ বিভিন্ন প্রকার সংক্রমণ জনিত রোগ, আর্থ্রাইটিস, মধুমেহ, হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ ও শারীরিক ব্যাথা উপশমে ব্যবহৃত ঔষধের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সমৃদ্ধ। বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফলে ক্যান্সার ফাইটিং নিউট্রিয়েন্ট এবং টিউমার ফাইটিং উপাদান রয়েছে। বিশেষত এটি ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে খুবই আশাজনক ফল দেখাচ্ছে।
ননীফলের উপকারিতা:
১.এই ফলের রস রক্ত পরিষ্কার ও নানা রকম দূষিত পদার্থকে শরীর থেকে বের করতে সহায়তা করে।
২.ডায়াবেটিস ও এলার্জি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩.হাড়ের সমস্যায় হাড়ের সমস্যার ক্ষেত্রে ননী ফলের রস খুব উপকারী। এমনটাই মনে করছেন ফরটিস্ হসপিটালের চিকিৎসক ডক্টর আহুজা। তার দাবী, যারা হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন,গাঁটে গাঁটে ব্যথা,তাদের ক্ষেত্রে এই ফল খুব উপকারী। তারা যদি রোজ এই ফলের রস বা শরবত খেতে পারেন, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ভালো ফল পাবেন। ব্যথা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবেন। তীব্র হাঁটুর যন্ত্রণায় যারা ভুগছেন, তাদের এই ননী ফলের শরবত খাওয়ার কথা বলেন তিনি। আর্থ্রারাইটিসের সমস্যায় ভোগা রুগীদের ক্ষেত্রে এই ননী ফল কিন্তু আশীর্বাদ স্বরূপ।
৪.ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা অনেকের শরীরেই ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকে। অর্থাৎ ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায় যেটার কারণে নানান সমস্যা হয়। হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। এছাড়াও আরও নানান সমস্যায় পড়তে হয়। এই বিরক্তিকর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যে কতটা কঠিন যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তারাই জানেন। সবসময় ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। কিন্তু এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে ননী ফল, যেটা ইউরিক অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৫.বিভিন্ন রোগের উপশমের পাশাপাশি শরীরে টি কোষের উৎপাদন বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যেহেতু এই ফলের রসে প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন রয়েছে তাই শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করতে ননীর জুড়ি মেলা ভার। করোনার রোগীদের এটি এনার্জি লেভেল বাড়ায় ও বিভিন্ন শরীরবৃত্তির ক্রিয়া উন্নত করে।
৬.এই রস পেটের সমস্যা, চর্মরোগ ও চুলের সমস্যার জন্যও বিশেষ উপকারী। এই রসে অ্যান্টি ফাঙ্গল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ থাকায় এটি স্ক্যাল্পের বিভিন্ন অসস্তি যেমন চুলকানি, ফুসকু়ড়ি ও খুশকির মত সমস্যা কমাতে সক্ষম। পাশাপাশি এটি ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত হওয়ায় ত্বককে টানটান রেখে ত্বকের বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে। বিশেষত যাদের শুষ্ক ত্বক তাদের খেতে এটি খুবই ভালো ফল দেয়।
৭.দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলিতে এটি সর্দি কাশি, শ্বাসকস্ট, লিভারের সমস্যা ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। মূলত এর অ্যান্টি ভাইরাল গুণ সর্দি কাশি ও জ্বরের থেকে আমাদেরকে অনেকটাই দূরে রাখতে সক্ষম। করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্যও বেশ ফলদায়ক।
৮.এনার্জি বাড়াবে ননী এনার্জি কমে যাচ্ছে? যখন তখন ক্লান্তি অনুভব করছেন? তাহলে খান ননী ফলের শরবত বা রস। ব্যাস, দেখবেন ক্লান্তি যেন কোথায় উধাও। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। এক চুটকিতে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে ননী ফল কিন্তু দুর্দান্ত, যেটা শারীরিক ও মানসিক দুই ধরণের ক্লান্তিই কমায়। এনার্জি লেবেল বাড়ায় ও শারীরিক বিভিন্ন ক্রিয়াগুলিকে উন্নত করতে সাহায্য করে,বলছেন বৈদ্যনাথের ক্লিনিক্যাল অপারেশন ম্যানেজার ডক্টর আশুতোষ গৌতম।
কিভাবে ননীর জুস তৈরি করবেন:
*খাবার পদ্ধতি-১
৫০০ গ্রাম ফলে ১ লিটার পানি মিক্সড করে জুস করবেন তারপর ছাকনা দিয়ে ভালোভাবে ছেকে নিন। ফলটি বেশি দিন থাকে না,গাছ থেকে পারার পড়ে ৪৮ ঘণ্টা বেশি থাকেনা, পেকে যায় বা গলে যায়! তাই জুস করে বোতলজাত করতে হয়।
*পদ্ধতি-২
১ কেজি ফলের সাথে কয়েকটি কাচা আপেল মিক্সড করে পানি দিয়ে ব্লেন্ডারে জুস করে খেতে পারেন
*পদ্ধতি-৩
১ কেজি ফল একটি কাচের জারে রেখে দিন রোদের মধ্যে ১৫ -২০ দিন তাহলে ফল গুলো গলে গিয়ে নিচে রস জমা হবে
*খাওয়ার নিয়ম:
প্রতিদিন ১০ মিলিগ্রাম পরিমাণ সেবন করুন সকালে ও রাতে ননীফল।
নিহাদ সাজিদ