বিপ্লব হাসান হৃদয়,শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
শরীয়তপুর সদর উপজেলার বটতলা বাসুদেব মার্কেটে অবস্থিত পালং মেডিকেল সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে কোনো বৈধ অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হয়ে আসছিল। সরকারি বিধি অনুযায়ী, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক হলেও, এই মেডিকেল সেন্টারের কর্তৃপক্ষ তা একেবারেই মানেনি। অবৈধ কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ভুল রিপোর্ট প্রদান এবং চিকিৎসা সেবায় অবহেলার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার সকালে আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আল বিধান মোহাম্মদ সানাউল্লাহ। অভিযানের সময় হাসপাতালের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও লাইসেন্স চেক করা হয়। কিন্তু ক্লিনিক পরিচালনার জন্য কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে হাসপাতালটি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন এই পালং মেডিকেল সেন্টারের বিরুদ্ধে । তারা জানান, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে যোগসাজশে কিছু দালাল প্রতিনিয়ত হাসপাতালে থাকেন। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওই পালং মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যেতো। এর পর তাদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হইতে প্রতি রিপোর্ট থেকে। হাসপাতালটি নিয়মিতভাবে ভুল চিকিৎসা ও ভুল রিপোর্ট সরবরাহ করত, যার ফলে রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছিল। এছাড়াও, ওষুধ ও অন্যান্য সেবার জন্য অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয় বিবেচনা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আল বিধান মোহাম্মদ সানাউল্লাহ হাসপাতালটি অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে লাইসেন্স ছাড়া কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক পরিচালনা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অনেক দিন ধরেই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে সাধারণ মানুষ প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেল।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আল বিধান মোহাম্মাদ সানাউল্লাহ বলেন, পালং মেডিকেল সেন্টার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনুমোদনের জন্য আবেদন করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে শরীয়তপুর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে, পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় ক্লিনিকটিকে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হয়নি।
আজ আমরা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে ক্লিনিক বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছি।
পরবর্তীতে যদি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ অনুমতি ব্যতীত কার্যক্রম চালু রাখে, তাহলে আইন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএস