ঢাকা ০১:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাওর সুরক্ষায় মাস্টারপ্ল্যান করছে সরকার : পরিবেশ উপদেষ্টা

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, হাওর সুরক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ৫টি হাওরে বাধ নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, পর্যটন সুরক্ষা ও নীতিমালা প্রণয়নসহ ৪টি প্রধান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) দুপুরে হাওরের সংকট ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। নেত্রকোনা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকার উদ্যোগে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। গ্রিন কনসার্ন ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রফিক মুহাম্মদ।

রিজওয়ানা বলেন, হাওরের ইকো সিস্টেম পৃথিবীতেই বিরল। এটিকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। হাওরের সীমানা নির্ধারণ করে কৃষি-জমি থেকে মাটি উত্তোলনের মতো ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। আপনারা যারা এই সেমিনারে রয়েছেন আপনারা দীর্ঘকাল ধরে হাওরের চিকিৎসা, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলে আসছেন। আসলে সমস্যা চারপাশে ভরা। আমিও হাওরের মানুষ, হবিগঞ্জের। তাই হাওর নিয়ে যখন কেউ কথা বলেন তখন আমার আবেগে একটা নাড়া দেয়। হাওর যারা দেখেননি; আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম যখন এই দায়িত্বে আসিনি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে আবারও পড়াবো।

উপদেষ্টা বলেন, হাওরের সীমানা নির্ধারণেও ভিন্নতা রয়েছে। কিছু পুকুর কিছু খাল কিছু নদী বাকী হচ্ছে ধানি জমি। সেগুলো হচ্ছে মানুষের নামে রেকর্ডকৃত। ফলে অনেক মানুষ এই হাওরের মালিকানায় সম্পৃক্ত থাকায় হাওর ব্যবস্থাপনায় কঠিন হয়ে পড়ে। সে জন্য হাওরের একটা মাস্টারপ্ল্যান নির্ধারণে আমরা একটা দেশব্যাপী কর্মশালা করেছি, কর্মশালায় যে অভিমতগুলো পাওয়া গেছে সে অভিমতগুলো এই মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে সংশোধনও করা হয়েছে। এরপর আমরা ওয়েবসাইটে দিবো।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে বাঁধ নির্মাণটা কিভাবে করা হবে, কীভাবে স্থানীয় উপকারগুলো ঠিক করা হবে। কাদের সেই কাজে অংশগ্রহণ করাতে হবে। আপনারা প্রায় সময় রিপোর্ট করেন যথাসময়ে কাজগুলো সম্পন্ন হয় না। এই বিষয়ে সরকারের যে নীতি-গাইড লাইন রয়েছে সেটাকে ভুল বলবো না; তবে বলবো- কেন শুরু করলো না। হাওরের পানি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে নামে না তাহলে কেমন করে কাজ হবে? মূলত ১৫ অক্টোবর বলা হয়েছে এই জন্য যে কোনো সময় যদি আগে পানি নেমে যায় তাহলে কাজটা যেন বিলম্ব না হয়। আগে পত্রিকায় দেখতাম কাজ শুরু হয়নি। এবার নিজে দায়িত্ব নিয়ে বাস্তবতা দেখলাম- আসলে সেই সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব না। কারণ হচ্ছে ঐখানে পানি এখানো নামেনি।

হাওরের যখন বাঁধ নির্মাণ করা হয় সেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠির অংশগ্রহণ থাকে না মন্তব্য করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, কারণ হচ্ছে যাকে কাজে অন্তর্ভুক্ত না করা হয় অনেক সময় সে জমি দিতে রাজি হয় না। তাছাড়া আমাদের সবকিছুতেই একটা রাজনীতি আছে। কাজেই সেখানে আমরা একটা সংশোধনী এনে সত্যিকার অর্থেই যাদের কাজের বিনিময়ে টাকা পাওয়া উচিত তারাই যেন অংশগ্রহণ করতে পারে। সেটা ৫০/৫০ হবে নাকি ৭০/৩০ হবে সেটা আমরা এখন চিন্তা করছি। হাওরের বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে আরেকটা অন্তরায় হচ্ছে মাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

হাওরের বৃক্ষরোপণের গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমি নিজেই কিন্তু হালকালুকি হাওর নিয়ে মামলা করেছি। লক্ষাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে; তখন বেলায় কাজে ছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম কত গাছ লাগিয়ে ছিলেন তখন তারা বলত ফাইলটা আমাদের এই অফিসে নাই হেড অফিসে আছে। সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছি কোন কোন হাওরের বৃক্ষরোপন সম্ভব, সেটার একটা তালিকাও প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছি। কিন্তু আজকে সেমিনারে বৃক্ষরোপন নিয়ে যে তথ্য পেলাম তাতে আমার মনে হয় শুধু গাছ লাগালেই হবে না সেখানে একটা মনিটরিং ব্যবস্থাও লাগবে।

কেকে

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওর সুরক্ষায় মাস্টারপ্ল্যান করছে সরকার : পরিবেশ উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ১০:০৮:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, হাওর সুরক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ৫টি হাওরে বাধ নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, পর্যটন সুরক্ষা ও নীতিমালা প্রণয়নসহ ৪টি প্রধান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) দুপুরে হাওরের সংকট ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। নেত্রকোনা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকার উদ্যোগে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। গ্রিন কনসার্ন ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রফিক মুহাম্মদ।

রিজওয়ানা বলেন, হাওরের ইকো সিস্টেম পৃথিবীতেই বিরল। এটিকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। হাওরের সীমানা নির্ধারণ করে কৃষি-জমি থেকে মাটি উত্তোলনের মতো ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। আপনারা যারা এই সেমিনারে রয়েছেন আপনারা দীর্ঘকাল ধরে হাওরের চিকিৎসা, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলে আসছেন। আসলে সমস্যা চারপাশে ভরা। আমিও হাওরের মানুষ, হবিগঞ্জের। তাই হাওর নিয়ে যখন কেউ কথা বলেন তখন আমার আবেগে একটা নাড়া দেয়। হাওর যারা দেখেননি; আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম যখন এই দায়িত্বে আসিনি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে আবারও পড়াবো।

উপদেষ্টা বলেন, হাওরের সীমানা নির্ধারণেও ভিন্নতা রয়েছে। কিছু পুকুর কিছু খাল কিছু নদী বাকী হচ্ছে ধানি জমি। সেগুলো হচ্ছে মানুষের নামে রেকর্ডকৃত। ফলে অনেক মানুষ এই হাওরের মালিকানায় সম্পৃক্ত থাকায় হাওর ব্যবস্থাপনায় কঠিন হয়ে পড়ে। সে জন্য হাওরের একটা মাস্টারপ্ল্যান নির্ধারণে আমরা একটা দেশব্যাপী কর্মশালা করেছি, কর্মশালায় যে অভিমতগুলো পাওয়া গেছে সে অভিমতগুলো এই মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে সংশোধনও করা হয়েছে। এরপর আমরা ওয়েবসাইটে দিবো।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে বাঁধ নির্মাণটা কিভাবে করা হবে, কীভাবে স্থানীয় উপকারগুলো ঠিক করা হবে। কাদের সেই কাজে অংশগ্রহণ করাতে হবে। আপনারা প্রায় সময় রিপোর্ট করেন যথাসময়ে কাজগুলো সম্পন্ন হয় না। এই বিষয়ে সরকারের যে নীতি-গাইড লাইন রয়েছে সেটাকে ভুল বলবো না; তবে বলবো- কেন শুরু করলো না। হাওরের পানি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে নামে না তাহলে কেমন করে কাজ হবে? মূলত ১৫ অক্টোবর বলা হয়েছে এই জন্য যে কোনো সময় যদি আগে পানি নেমে যায় তাহলে কাজটা যেন বিলম্ব না হয়। আগে পত্রিকায় দেখতাম কাজ শুরু হয়নি। এবার নিজে দায়িত্ব নিয়ে বাস্তবতা দেখলাম- আসলে সেই সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব না। কারণ হচ্ছে ঐখানে পানি এখানো নামেনি।

হাওরের যখন বাঁধ নির্মাণ করা হয় সেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠির অংশগ্রহণ থাকে না মন্তব্য করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, কারণ হচ্ছে যাকে কাজে অন্তর্ভুক্ত না করা হয় অনেক সময় সে জমি দিতে রাজি হয় না। তাছাড়া আমাদের সবকিছুতেই একটা রাজনীতি আছে। কাজেই সেখানে আমরা একটা সংশোধনী এনে সত্যিকার অর্থেই যাদের কাজের বিনিময়ে টাকা পাওয়া উচিত তারাই যেন অংশগ্রহণ করতে পারে। সেটা ৫০/৫০ হবে নাকি ৭০/৩০ হবে সেটা আমরা এখন চিন্তা করছি। হাওরের বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে আরেকটা অন্তরায় হচ্ছে মাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

হাওরের বৃক্ষরোপণের গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমি নিজেই কিন্তু হালকালুকি হাওর নিয়ে মামলা করেছি। লক্ষাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে; তখন বেলায় কাজে ছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম কত গাছ লাগিয়ে ছিলেন তখন তারা বলত ফাইলটা আমাদের এই অফিসে নাই হেড অফিসে আছে। সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছি কোন কোন হাওরের বৃক্ষরোপন সম্ভব, সেটার একটা তালিকাও প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছি। কিন্তু আজকে সেমিনারে বৃক্ষরোপন নিয়ে যে তথ্য পেলাম তাতে আমার মনে হয় শুধু গাছ লাগালেই হবে না সেখানে একটা মনিটরিং ব্যবস্থাও লাগবে।

কেকে