বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের সব ইসলামী ব্যাংকগুলো একীভূত করে বড় দুটো ব্যাংক গড়ে তোলা হবে। ইসলামী ব্যাংকগুলো পুরোদমে নতুনরূপ দেওয়া হবে। একটি বড় ও অনেকগুলো ছোট ছোট ইসলামী ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে আছে। এসব ব্যাংক একীভূত করে বড় দুটি ইসলামী ব্যাংক গড়ে তোলা হবে। ইসলামী ব্যাংক নিয়ে আমাদের প্রোপার রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক নেই। তাই ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য আইন, তদারকি ব্যবস্থা চালু করা হবে। বৈশ্বিক উত্তম চর্চা অনুসরণ করে এসব করা হবে।
বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) এর আয়োজিত দুই দিনব্যাপী দশম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলন-২০২৫ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য আব্দুল হান্নান চৌধুরী।
গভর্নর বলেন, বিদায়ী সরকারের আমলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও নন-ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। পাচার করা অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন এজেন্সি কাজ করছে এবং আমরা এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছি। এ ক্ষেত্রে আইনি ও নৈতিক দুই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাচার হওয়া অর্থ সম্পূর্নরূপে উদ্ধার না হলেও যারা অর্থ পাচার করেছে তাদের জীবন কঠিন করে ফেলা হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ অর্থ পাচার করতে না পারে, সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, যেসব ব্যাংকে অনিয়ম হয়েছে, আমানতকারীদের স্বার্থে এসব ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথমে ১১ ব্যাংক, এরপরও আরও ২ ব্যাংকে পরিবর্তন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপের মুখে ইতোমধ্যে একটি ব্যাংক তাদের নিজের কার্যক্রম পরিবর্তন করেছে। সঠিক নিয়মের মধ্যে থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয় একদম পরিস্কার ও লাউড। ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কারা পর্ষদে আসবেন, স্বতন্ত্র পরিচালক কারা হবে তার যোগ্যতা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
ব্যাংক খাতে সমস্যার পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকও একটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর বিভিন্ন চাপ থাকে, ব্যাংক খাতে দ্বৈত শাসন আছে। স্বায়ত্তশাসন ও তদারকি বাড়াতে কাজ চলছে, যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যকরী হয়ে উঠে।
‘সমস্যায় পড়া বেশিরভাগ ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে চলছে। এসব ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। এসব ব্যাংক ঠিক করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। রাজনীতির পালাবাদলে এসব সংস্কার সমর্থন লাগবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে হবে।’, বলেন তিনি।
আগামীর ব্যাংকিং খাত নিয়ে গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেম আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সম্মানজনক খাত হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তবে তার জন্য সময় দিতে হবে। একদিনই তা সম্ভব হবে না।
অনুষ্ঠানে বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই একাডেমিক সম্মেলনের লক্ষ্য ব্যাংকিং খাতের উপর প্রভাব ফেলছে এমন ক্রমবর্ধমান নিয়মকানুন এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিশ্লেষণাত্মক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা।
গত দশকে এই খাতের রূপান্তর এবং ডিজিটালাইজেশনের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন তিনি বলেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, ডিজিটালাইজেশন কাউকে পেছনে ফেলে না যায়। ব্যাংকিং কার্যক্রম, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতা রূপান্তরে এআই, ব্লকচেইন এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তির ভূমিকার ওপরও জোর দিতে হবে।
এছাড়া সবুজ অর্থায়ন গ্রহণ এবং দেশের একটি টেকসই, জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক অর্থনীতিতে রূপান্তরকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে এই খাতের দায়িত্বের ওপর জোর দিতে বলেন তিনি।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, একটি দেশের অর্থনীতির শক্তি তার ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। একটি স্থিতিশীল, দক্ষ ও সু-নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা কেবল প্রয়োজনীয়তা নয় এটি টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি। বাংলাদেশের জন্য এই ভিত্তিটি চাপের মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হওয়া সত্ত্বেও ব্যাংকিং খাত ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এর অন্যতম কারণ নিয়মগুলোর শিথিল বাস্তবায়ন, ঋণ প্রদানে অনিয়ম, ঋণ আদায় না হওয়া, তীব্র তারল্য সমস্যা, দুর্বল শাসন কাঠামো এবং কার্যকারিতা হ্রাসের উদ্বেগজনক অবনতি। এই চ্যালেঞ্জগুলো সম্মিলিতভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থার জনসাধরণের আস্থাকে ক্ষুন্ন করেছে। যদিও পরিস্থিতি ব্যাংকভেদে যথেষ্ট ভিন্ন।’
কেকে