মো:মীর মারুফ তাসিন,কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ
বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস, রক্ত দিয়ে হলেও অধিকার রক্ষার শপথ।কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আজ (২০ মার্চ) মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বিক্ষোভ মিছিলে রূপান্তরিত হয়েছে। তাদের দাবি একটাই “ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য সংরক্ষিত ৩০% কোটা বাতিল করতে হবে এবং ১০ম গ্রেডের চাকরিতে শুধুমাত্র ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য অনুযায়ী, “১০ম গ্রেডের চাকরির জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও আত্মত্যাগ রয়েছে। রক্ত দিয়ে অর্জিত এই অধিকার কোনোভাবেই ভাগাভাগি হতে দেওয়া যাবে না।”
সম্প্রতি আদালতের রায়ে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য ৩০% কোটা সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের মতে, এই রায় কারিগরি শিক্ষার ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করবে। তাদের দাবি,
১. আদালতের রায় বাতিল করতে হবে – এই রায়কে “অযৌক্তিক” উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটি কারিগরি শিক্ষার মান কমিয়ে দেবে এবং যোগ্যদের বঞ্চিত করবে।
- ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর পদ বিলুপ্ত করতে হবে – তাদের মতে, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকৌশল শিক্ষায় দক্ষ নন। তাই তাদের ল্যাব সহকারী পদে রূপান্তর করা উচিত।
- জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে উন্মুক্ত নিয়োগ দিতে হবে – শুধুমাত্র ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য পরীক্ষা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সরেজমিনে দেখা যায় যে
শিক্ষার্থীরা প্রথমে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানালেও, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। একপর্যায়ে তারা ক্যাম্পাস চত্বরে অবস্থান নিয়ে “ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর হটাও, কারিগরি শিক্ষা বাঁচাও” স্লোগানে মুখরিত করেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, তাদের দাবি মানা না হলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে নামবেন। আগামী সপ্তাহে ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এছাড়া, পরীক্ষা বর্জন ও ক্লাস বয়কটের মতো কর্মসূচি নেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।
এই আন্দোলন নিয়ে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে। কারিগরি শিক্ষাবিদদের একাংশ বলছেন, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য কোটা সংরক্ষণ প্রকৌশল শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, প্রকৌশল বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান ছাড়া একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবেন না।
অন্যদিকে, আদালতের এই রায়ের পক্ষে যাঁরা রয়েছেন, তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা শিক্ষা ব্যবস্থায় অবদান রেখে আসছেন। তাই তাদের পদোন্নতির সুযোগ থাকা উচিত।
কুমিল্লা পলিটেকনিকের আন্দোলন এখন সারাদেশের কারিগরি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।
এদিকে, কুমিল্লা পলিটেকনিকের প্রশাসন এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি ন্যায্য কিনা, তা বিচার-বিশ্লেষণের বিষয়। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট এই আন্দোলন এখন আর কেবল কুমিল্লা পলিটেকনিকে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে না আসে, তবে এই আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, সরকার কীভাবে এই সংকটের সমাধান করে সংলাপের মাধ্যমে নাকি কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে?
এমএস