বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় জনগনের চোখে ধুলো দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বালু লুট করছেন উপজেলা বিএনপি এর সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অটল।
আমরুল ইউনিয়নের শৈউলঢুকরী উত্তরপাড়া গ্রামে বাঙালী নদী খননের বালু রাখা হয়েছিলো। গত ১২জানুয়ারি থেকে সেই বালু বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছেন তিনি। গড়ে প্রতি দিন রাতে ২শতাধিক ট্রাকে বালু যাচ্ছে বলে গ্রামবাসি দাবি করছেন। পয়েন্টে প্রতি ট্রাক বালুর দাম রাখা হচ্ছে ৮শত থেকে এক হাজার টাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া নগর ঈদগাহ মাঠে সংস্কারের জন্য ৩লক্ষ ঘনফুট বালু লীজকৃত ২৭/১০/২০২৪ তারিখে দপ্তরদাশের স্পষ্টতই বলা আছে, ‘বনিত স্থান ব্যতীত অন্য কোথাও বালী/ মাটি সরবরাহ করা যাবে না। পরিবহন ব্যয় সংশ্লিষ্ট্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্বাহ করতে হবে’।
কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দপ্তরদাশকে অমান্য করে সে বালু জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার(৩০জানুয়ারি) আসাদুজ্জামান অটলকে প্রধান করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। অভিযোগ আসা অন্যরা হলো ছাত্রদল নেতা সবুজ, বিএনপি কর্মী সুজন এবং নগর ঈদগাহ মাঠ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মানিক। সে অভিযোগেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি থানা পুলিশ।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, বালু লুটের ঘটনায় বিএনপি এর বদনাম হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি সেনাবাহিনি দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বালু লুট বন্ধে প্রশাসনের কাছে দাবি করেছেন তাঁরা।
সরেজমিনে জানাযায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঙালী নদী খননের পর পাড়ে বালু রেখেছিলো। আমরুল ইউনিয়নের নগর ঈদগাহ মাঠ সংস্কারের জন্য বালু চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করেন উপজেলা কোকো পরিষদের সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ। মাঠ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ২০২৪সালের ১৬অক্টোবর ৩লক্ষ সেফ্টি বালু নিলামে ডেকে নেন তিনি। একই বছরের ১৮অক্টোবর আরেকটি নিলামে ৮লক্ষ ৩২হাজার ৫শত ৪১ঘন ফুট বালু ডেকে নেন তিনি। এই নিলামের বাহিরেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি টাকার বালু রয়ে যায়।
জানতে চাইলে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আসাদুজ্জামান অটল বালু লুট করছেন তা আমার জানাছিলো না। আসাদুজ্জামান অটলের কোন কাগজ নাই। এ বিষয়ে থানায় কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিব।
মাসুদুজ্জামান মাসুদ সংবাদ বুলেটিনকে বলেন, পৃথক দুটি নিলামে ডেকে আমি পেয়েছিলাম। শৈলধুকড়ী উত্তরপাড়া বাঙালী নদী সংলঘ্ন কৃষকের জমিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেই বালু রাখাছিলো। বালু নিয়ে আমি নগর ঈদগাহ মাঠেই ফেলেছি। কিন্তু আসাদুজ্জামান অটল বিএনপি প্রভাব খাটিয়ে আমার পয়েন্টে ঢুকে পড়েন। নিলামে পাওয়া আমার বালু সহ নিলাম না হওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি টাকার বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন অটল।
মাসুদ আরো বলেন, সবার চোখে ধুলো দিয়ে ১২জানুয়ারি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত হাজারো গাড়ি বালু লুট করে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করেছেন অটল। এখনো তা অব্যাহত আছে। পুলিশ, প্রশাসন কেউ কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না। উল্টো অটল ও তার অনুসারীরা সামাজিক প্লাটফর্মে আমার নামে মানহানিকর কুৎসা রটনা করছে। যা মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন।
বালুর পয়েন্টে গিয়ে কথা হয় ম্যানেজার ওয়াহেদ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা আসাদুজ্জান অটল চেয়ারম্যান আমাকে পয়েন্টে রেখেছেন।
অভিযোগ ওঠা ওই ঈদগাহ মাঠ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মানিক সংবাদ বুলেটিনকে বলেন, ঈদগাহ মাঠে বালু ফেলা হয়েছে। আরো লাগবে। কিন্তু ট্রাক ভাড়া দেয়ার টাকা নাই। তাই পয়েন্ট থেকে বালু অন্য জায়গায় বিক্রি করে ট্রাক ভাড়া তোলা হচ্ছে।
জানতে চাইলে আমরুল ইউনিয়ন কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর হোসেনসহ অনেকে সংবাদ বুলেটিনকে বলেন, অটলের বালু লুটের ঘটনায় দলের ভাব মূর্তি ক্ষূন্ন হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলার নেতাদের কাছে অনুরোধ করছি। সেই সাথে সেনাবাহিনি দিয়ে বালু লুট বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপি এর সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অটল সংবাদ বুলেটিনকে বলেন, আমি বালুর পয়েন্টর সাথে জড়িত নাই। বালু ঈদগাহ মাঠেই নেয়া হচ্ছে। বাহিরে নেয়ার সুযোগ নাই। ঈদগাহ মাঠে বালু দেয়ার জন্য ট্রাক ভাড়া খরচ তুলতে বাহিরে বিক্রি করা হয়েছে।
শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাইফুর রহমান সংবাদ বুলেটিনকে বলেন, বিষয়টি ব্যাপারে শাজাহানপুর থানার ওসিকে নির্দেশনা দিয়েছি।
শাজাহানপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওয়াদুদ আলম সংবাদ বুলেটিনকে জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক শৈউলঢুকরী এলাকায় অভিযোগকৃত বালুর পয়েন্ট ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এমএস