ঢাকা ০১:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
শিক্ষার্থীদের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষন চালু করলো বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ১২০০ বস্তা চাল নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে: উপদেষ্টা আসিফ বাসে ওঠার সময় যাত্রীদের ছবি তুলে রাখা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় কমিটি হচ্ছে : আইন উপদেষ্টা ফারুকের মনোনয়ন বাতিল ও আমিনুলের মনোনয়ন কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট সেপ্টেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামবে : গভর্নর বিভিন্ন দেশের ভিসা বন্ধ হওয়ার জন্য দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীরাই দায়ী: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আমরা ক্ষমতা নেইনি, দায়িত্ব নিয়েছি: অর্থ উপদেষ্টা নতুন চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিশ্চয়তা চায় ইরান মনপুরায় ভিজিএফ চাউলের চুরি ধরা পরায় সাংবাদিকদের হুমকি ওয়ার্ড মেম্বারের

ছাত্রলীগের হাতে বিশ্বজিৎ হত্যার ১২ বছর, ঘুরে বেড়াচ্ছেন দন্ডপ্রাপ্তরা

ছবি : সংগৃহীত

বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা কান্ডের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। পরিবারের কাছে বিশ্বজিৎ এখন শুধুই স্মৃতি। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বাবা মায়ের কান্না যেন থামছে না।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের (ভিক্টোরিয়া পার্ক) সামনে শিবিরের কর্মী ভেবে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আশে পাশে সাধারণ মানুষ দোকানদার পুলিশ থাকলেও কেও এগিয়ে আসেনি তাকে বাচাতে। প্রান বাচাতে এদিক সেদিক দৌড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে প্রান ভিহ্মা চেয়েও পাননি তিনি।  শাঁখারীবাজারে দর্জির দোকান ছিল বিশ্বজিৎ এর।

পরে অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল আহমেদ। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম।

২০১৩ সালের ২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু বিচার। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর মামলাটিতে একই ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক এ বি এম নিজামুল হক ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন-ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম শাকিল (চাপাতি শাকিল), মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, কাইউম মিয়া টিপু, সাইফুল ইসলাম, রাজন তালুকদার ও মীর মো. নূরে আলম লিমন। আর যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন- এইচএম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা, খন্দকার মো. ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, আলাউদ্দিন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন ইমরান, আজিজুর রহমান আজিজ, আল-আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশারফ হোসেন।

পরে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট হাইকোর্ট নিম্ন আদালতে মৃত্যুদন্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদন্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদন্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে রায় দেয়।

এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে আপিল করে খালাস পেয়েছিলেন দুজন। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া যে দুই আসামি হাইকোর্টে খালাস পান তারা হলেন-সাইফুল ইসলাম ও কাইয়ুম মিয়া।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া চার আসামি হলেন মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, ইমদাদুল হক ও নূরে আলম (পলাতক) ওরফে লিমন। মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয় রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল ও রাজন তালুকদারের (পলাতক)। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডিত ১৩ আসামির মধ্যে থেকে এইচএম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা খালাস পান হাইকোর্টে। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ১১ আসামির সবাই পলাতক।

বিশ্বজিৎ দাসের মা কল্পনা দাস বলেন, আমার বিশ্ব (বিশ্বজিৎ) তো কখনো রাজনীতি করেনি। আমার ছেলে কাজ করে সংসার চালাতো। ছেলেকে জগন্নাথের ছাত্রলীগের পোলাপাইন মেরে ফেললো। আজ ১২ বছর হয়ে গেলো অপরাধীদের বিচার হলো না। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমরা বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত। আমি আমার বিশ্ব হত্যার বিচার চাই।

বিশ্বজিৎ দাসের বাবা অনন্ত দাস বলেন, ছেলে আমাদের ভরণপোষণ দিতো। ছেলেকে প্রকাশ্যে দিন দুপুরে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আজ ১২ বছর ধরে এখনো বিচার পেলাম না। এই সরকারের আমলে আমার ছেলের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি। তাহলে মরে গেলো অন্তত আত্মা শান্তি পাবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুরের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, ১২ বছর আগে  প্রকাশ্যে তাকে কারা হত্যা করে তা আমরা জানি। তারা স্বৈরাচার সরকারের দোসর ছিলেন। তাই তারা অতি দ্রুত আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ ধরে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিশ্বজিতের পরিবার। আমরা চাই অতি দ্রুত সব অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হোক।

এমএস

১।পছন্দের ক্লিনিকে টেস্ট না করায় রোগীর রিপোর্ট ছুড়ে ফেলে দিলন ডাক্তার

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থীদের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষন চালু করলো বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি

ছাত্রলীগের হাতে বিশ্বজিৎ হত্যার ১২ বছর, ঘুরে বেড়াচ্ছেন দন্ডপ্রাপ্তরা

আপডেট সময় : ১২:২৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যা কান্ডের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। পরিবারের কাছে বিশ্বজিৎ এখন শুধুই স্মৃতি। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বাবা মায়ের কান্না যেন থামছে না।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধের মধ্যে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের (ভিক্টোরিয়া পার্ক) সামনে শিবিরের কর্মী ভেবে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আশে পাশে সাধারণ মানুষ দোকানদার পুলিশ থাকলেও কেও এগিয়ে আসেনি তাকে বাচাতে। প্রান বাচাতে এদিক সেদিক দৌড়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে প্রান ভিহ্মা চেয়েও পাননি তিনি।  শাঁখারীবাজারে দর্জির দোকান ছিল বিশ্বজিৎ এর।

পরে অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল আহমেদ। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম।

২০১৩ সালের ২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু বিচার। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর মামলাটিতে একই ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক এ বি এম নিজামুল হক ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন-ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম শাকিল (চাপাতি শাকিল), মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, কাইউম মিয়া টিপু, সাইফুল ইসলাম, রাজন তালুকদার ও মীর মো. নূরে আলম লিমন। আর যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন- এইচএম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা, খন্দকার মো. ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, আলাউদ্দিন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন ইমরান, আজিজুর রহমান আজিজ, আল-আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশারফ হোসেন।

পরে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট হাইকোর্ট নিম্ন আদালতে মৃত্যুদন্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদন্ড বহাল, চারজনের মৃত্যুদন্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে রায় দেয়।

এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে আপিল করে খালাস পেয়েছিলেন দুজন। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া যে দুই আসামি হাইকোর্টে খালাস পান তারা হলেন-সাইফুল ইসলাম ও কাইয়ুম মিয়া।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া চার আসামি হলেন মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, ইমদাদুল হক ও নূরে আলম (পলাতক) ওরফে লিমন। মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয় রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল ও রাজন তালুকদারের (পলাতক)। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডিত ১৩ আসামির মধ্যে থেকে এইচএম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা খালাস পান হাইকোর্টে। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ১১ আসামির সবাই পলাতক।

বিশ্বজিৎ দাসের মা কল্পনা দাস বলেন, আমার বিশ্ব (বিশ্বজিৎ) তো কখনো রাজনীতি করেনি। আমার ছেলে কাজ করে সংসার চালাতো। ছেলেকে জগন্নাথের ছাত্রলীগের পোলাপাইন মেরে ফেললো। আজ ১২ বছর হয়ে গেলো অপরাধীদের বিচার হলো না। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমরা বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত। আমি আমার বিশ্ব হত্যার বিচার চাই।

বিশ্বজিৎ দাসের বাবা অনন্ত দাস বলেন, ছেলে আমাদের ভরণপোষণ দিতো। ছেলেকে প্রকাশ্যে দিন দুপুরে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আজ ১২ বছর ধরে এখনো বিচার পেলাম না। এই সরকারের আমলে আমার ছেলের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি। তাহলে মরে গেলো অন্তত আত্মা শান্তি পাবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুরের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, ১২ বছর আগে  প্রকাশ্যে তাকে কারা হত্যা করে তা আমরা জানি। তারা স্বৈরাচার সরকারের দোসর ছিলেন। তাই তারা অতি দ্রুত আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ ধরে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিশ্বজিতের পরিবার। আমরা চাই অতি দ্রুত সব অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হোক।

এমএস

১।পছন্দের ক্লিনিকে টেস্ট না করায় রোগীর রিপোর্ট ছুড়ে ফেলে দিলন ডাক্তার