ঢাকা ০২:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বাংলাদেশপন্থিদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধপন্থি হতে হবে: মাহফুজ আলম

মাহফুজ আলম (ছবি: সংগৃহীত)

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মানে বাংলাদেশ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান মানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশপন্থিদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধপন্থি হতে হবে। তবে এটাও সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধ করা অনেকেই ফ্যাসিস্ট ও তাঁবেদার হয়ে উঠেছিলেন। আজ তারা ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয়েছেন।

মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

মাহফুজ আলম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা যাবেন, তারাও মজলুম বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে অতীতে পরাজিত হয়েছেন, সামনেও পরাজিত হতে বাধ্য।

তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর কী হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনা করুন। ইতিহাস পর্যালোচনা করুন। কোনো সমস্যা নেই। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কী কী ঘটেছে, তা নিয়েও তর্ক উঠতে পারে। কিন্তু সে সবই হবে মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিয়ে।

এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে মাহফুজ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘যেমন, শেখ মুজিবের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা নিয়ে আমরা বলব। উনি ফ্যাসিস্ট ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের জন্মে অনেক জাতীয় নেতৃত্বের মতো ওনার অবদান অনস্বীকার্য। তাই আমরা ’৭২–পূর্ব শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেব।’

তিনি লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ ফ্যাসিস্ট হতে পারেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ছিল আপামর জনগণের লড়াই। মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশের ফ্যাসিস্ট, ইসলামফোবিক ও খুনি হয়ে ওঠার কারণে আপনি খোদ মুক্তিযুদ্ধ বা সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অস্বীকার কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না। এটা রাষ্ট্রের ভিত্তির সাথে গাদ্দারি!’

মাহফুজ আলম আরও লিখেছেন, ‘আমরা ভুলে যাই, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ১০ বছরের ইতিহাস ছিল ফ্যাসিস্ট মুজিববাদী মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতবিরোধী, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যকার লড়াইয়ের ইতিহাস। কিন্তু সে জন্য আধিপত্যবাদবিরোধী কোনো মুক্তিযোদ্ধা খোদ মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার দুঃসাহস করেননি। এখানেই পিকিংপন্থীদের সাথে অন্যদের তফাত।’

এ দেশের মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও বাংলাদেশের জন্মকে স্বীকার করেই এ দেশে রাজনীতি করতে হবে উল্লেখ করে মাহফুজ লিখেছেন, ‘এর কোনো ব্যত্যয় হলে আপনাদের আমরা বাংলাদেশের পক্ষের, গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবে মেনে নেব না।’

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান মুক্তিযুদ্ধের পরে ‘ফ্যাসিস্ট মুজিববাদী প্রকল্পের’ বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, বাকশাল ২.০–এর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হিসেবে বর্ণনা করে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘কিন্তু মুক্তিযুদ্ধেরই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা। এ গণ-অভ্যুত্থানে বরং শেখ পরিবার ও মুজিববাদী প্রকল্প থেকে মুক্তিযুদ্ধ রিক্লেইমড (পুনরুদ্ধার) হলো।’

বাংলাদেশপন্থিদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধপন্থি হতে হবে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘তবে এটাও সত্য যে মুক্তিযুদ্ধ করা অনেকেই ফ্যাসিস্ট ও তাবেদার হয়ে উঠেছিলেন। আজ তারা ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা যাবেন, তারাও মজলুম বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে অতীতে পরাজিত হয়েছেন, সামনেও পরাজিত হতে বাধ্য।’

জুলাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সুযোগ নিয়ে এসেছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘লীগের সাথে বিচারকার্য সম্পন্ন করে রিকন্সাইল (বিরোধ মিটিয়ে ফেলা) করতেও আমরা আগ্রহী ছিলাম। অথচ দিল্লির আশ্রয়ে থেকে দেশবিরোধী চক্রান্ত করাকেই তারা বেছে নিল। আপনারাও ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। জাতিকে বিভাজন থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই ’৭১ ও ’২৪–কে নিঃশর্ত ও নিরঙ্কুশ মেনে এগোতে হবে।’

কেকে

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

অনলাইন স্ক্যাম ও জালিয়াতি প্রতিরোধে নতুন ফিচার আনল হোয়াটসঅ্যাপ

বাংলাদেশপন্থিদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধপন্থি হতে হবে: মাহফুজ আলম

আপডেট সময় : ০৮:৫১:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মানে বাংলাদেশ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান মানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশপন্থিদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধপন্থি হতে হবে। তবে এটাও সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধ করা অনেকেই ফ্যাসিস্ট ও তাঁবেদার হয়ে উঠেছিলেন। আজ তারা ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয়েছেন।

মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

মাহফুজ আলম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা যাবেন, তারাও মজলুম বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে অতীতে পরাজিত হয়েছেন, সামনেও পরাজিত হতে বাধ্য।

তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর কী হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনা করুন। ইতিহাস পর্যালোচনা করুন। কোনো সমস্যা নেই। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কী কী ঘটেছে, তা নিয়েও তর্ক উঠতে পারে। কিন্তু সে সবই হবে মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিয়ে।

এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে মাহফুজ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘যেমন, শেখ মুজিবের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা নিয়ে আমরা বলব। উনি ফ্যাসিস্ট ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের জন্মে অনেক জাতীয় নেতৃত্বের মতো ওনার অবদান অনস্বীকার্য। তাই আমরা ’৭২–পূর্ব শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেব।’

তিনি লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ ফ্যাসিস্ট হতে পারেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ছিল আপামর জনগণের লড়াই। মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশের ফ্যাসিস্ট, ইসলামফোবিক ও খুনি হয়ে ওঠার কারণে আপনি খোদ মুক্তিযুদ্ধ বা সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অস্বীকার কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না। এটা রাষ্ট্রের ভিত্তির সাথে গাদ্দারি!’

মাহফুজ আলম আরও লিখেছেন, ‘আমরা ভুলে যাই, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ১০ বছরের ইতিহাস ছিল ফ্যাসিস্ট মুজিববাদী মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতবিরোধী, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যকার লড়াইয়ের ইতিহাস। কিন্তু সে জন্য আধিপত্যবাদবিরোধী কোনো মুক্তিযোদ্ধা খোদ মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার দুঃসাহস করেননি। এখানেই পিকিংপন্থীদের সাথে অন্যদের তফাত।’

এ দেশের মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও বাংলাদেশের জন্মকে স্বীকার করেই এ দেশে রাজনীতি করতে হবে উল্লেখ করে মাহফুজ লিখেছেন, ‘এর কোনো ব্যত্যয় হলে আপনাদের আমরা বাংলাদেশের পক্ষের, গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবে মেনে নেব না।’

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান মুক্তিযুদ্ধের পরে ‘ফ্যাসিস্ট মুজিববাদী প্রকল্পের’ বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান, বাকশাল ২.০–এর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হিসেবে বর্ণনা করে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘কিন্তু মুক্তিযুদ্ধেরই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা। এ গণ-অভ্যুত্থানে বরং শেখ পরিবার ও মুজিববাদী প্রকল্প থেকে মুক্তিযুদ্ধ রিক্লেইমড (পুনরুদ্ধার) হলো।’

বাংলাদেশপন্থিদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধপন্থি হতে হবে উল্লেখ করে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘তবে এটাও সত্য যে মুক্তিযুদ্ধ করা অনেকেই ফ্যাসিস্ট ও তাবেদার হয়ে উঠেছিলেন। আজ তারা ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা যাবেন, তারাও মজলুম বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে অতীতে পরাজিত হয়েছেন, সামনেও পরাজিত হতে বাধ্য।’

জুলাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সুযোগ নিয়ে এসেছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘লীগের সাথে বিচারকার্য সম্পন্ন করে রিকন্সাইল (বিরোধ মিটিয়ে ফেলা) করতেও আমরা আগ্রহী ছিলাম। অথচ দিল্লির আশ্রয়ে থেকে দেশবিরোধী চক্রান্ত করাকেই তারা বেছে নিল। আপনারাও ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। জাতিকে বিভাজন থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই ’৭১ ও ’২৪–কে নিঃশর্ত ও নিরঙ্কুশ মেনে এগোতে হবে।’

কেকে