সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে আল আমিন আহমেদ সালমান (২৭) ও অনুপ তালুকদার অভি (২৩) নামের দুই চাঁদাবাজ সাংবাদিকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে মধ্যনগর মধ্য বাজারে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। সালমান কালের কণ্ঠ ও অনুপ সোনালী কণ্ঠ পত্রিকার মধ্যনগর উপজেলা প্রতিনিধি।
জানা যায়, ওইদিন দুুুপুরে মধ্যনগর সাংবাদিক এমএ মান্নান, সালমান ও অনুপসহ মধ্যনগর বাজারে একটি চায়ের দোকানে বসে কথা বলছিলেন। এ সময় সেখানে মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল হামিদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম মজনু উপস্থিত ছিলেন। এক সময় রায়হান উদ্দিন ও বাপ্পী হাসান সেখানে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বুঝাতে থাকেন তারা যেন চাঁদাবাজি না করে সত্য সংবাদ প্রকাশ করে। এনিয়ে রায়হান ও বাপ্পীর সাথে সাংবাদিক সালমান এবং অনুপের তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে তাদের মাঝে বাকবিতণ্ডা হয়। এতে সালমান ও অনুপ আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ সময় সেখানে থাকা উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল হামিদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম মজনু, রায়হান এবং বাপ্পীকে আহত সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চাওয়ান।
এঘটনায় সালমান ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে খবর পেয়ে প্রতিবেদক নিজে বৃহস্পতিবার (১৯ডিসেম্বর) রাতেই সাংবাদিক সালমানকে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে গেলে সে খানে গিয়ে তাকে তার সীটে পাওয়া যায়নি। পরে তার সাথের সীটের রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায় সে গেস্ট হাউজে চলে গেছে। তার মোবাইল নাম্বারে কল করলে সে রিসিভ করে নিশ্চিত করে যে সে গেস্ট হাউজে আছে। তবে সে যে গেস্ট হাউজে আছে বলেছে সেখানে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এর পর তাকে একাধিকবার কল করলেও সে কল না ধরায় তার সাথে দেখা করা এবং সে কোথায় আছে জানা যায়নি। আর এব্যাপারে সাংবাদিক অভির সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
রায়হান উদ্দিন ও বাপ্পী হাসন বলেন, সালমান বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ন আহবায়ক হওয়ারসত্তেও সে মধ্যনগরে প্রকাশ্য চলাফেরা করছে। কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সামলানের অবস্থান ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে। সাংবাদিকরা থাকবে নিরপেক্ষ। তবে আল আমিন দলীয় ও সাংবাদিকতার প্রভাব খাঁটিয়ে অনেক চাঁদাবাজি করেছে এবং বিএনপি সহ অনেক নিরীহ মানুষকে হয়রানী করেছে। অনুপসহ তারা দুজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির নিউজও হয়েছে। তাদের চাঁদাবাজির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনেকের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে। এখন যেন হয়রানী আর চাঁদাবাজি না করে আমরা তাদেরকে বুঝাতে গেলে এ নিয়ে তাদের সাথে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমরা তাদের ওপর কোনো হামলা করিনি। তবে আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স অনলাইন পোর্রটাল ও প্রিন্ট পত্রিকায় যে নিউজ বা প্রতিবেদন ছাপানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমরা ওইসব নিউজ ও হলুদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এসব চাঁদাবাজ ও হলুদ সাংবাদিকদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক এ দাবী করছি এবং সত্য সাংবাদের মাধ্যমে সমাজ ও দেশে শান্তি ফিরে আসুক।
মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ূম মজনু বলেন, আমি স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী। তবে রায়হান ও বাপ্পীর সাথে যে দুজন সাংবাদিকের তর্কবিতর্ক হয়েছে ওই দুজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ভারত থেকে চুরাই পথে আসা গরু, মহিষ সহ বিভিন্ন পন্যের চুরাই ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পৃক্ততা ও চাঁদাবাজির অনেক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি চাঁদাবাজি করতে গিয়ে মাইরও খেয়েছে। এসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো খুঁজলে পাবেন। এছাড়াও কালের কণ্ঠের সাংবাদিক আল আমিন আহমেদ সালমানের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সাংবাদিক এমএ মান্নান ও অনুপের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রথম আলো পত্রিকার ধর্মপাশা উপজেলা প্রতিনিধি সালেহ আহমদ নিউজ করেছেন। এসব চাঁদাবাজির ভিডিও আমাদের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে। তবে আমাকে জড়িয়ে আমার ইন্দনে এই ঘটনা ঘটেছে শিরোনামে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স অনলাইন পোর্রটাল ও প্রিন্ট পত্রিকায় যে নিউজ বা প্রতিবেদন ছাপানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি ওইসব নিউজ ও হলুদ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমন অপসাংবাদিকতা বন্ধের জন্য আইন প্রশাসনের কাছে আমি দাবী জানাচ্ছি।
ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুবীর সরকার শুক্রবার (২০ডিসেম্বর) বলেন, রোগী (সাংবাদিক সালমান) শুক্রবার সকালে তার কাছে দেখা করতে গেলে তিনি রোগীর শরীরে কোনো ব্যান্ডেজ দেখেননি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃ বিভাগের ভর্তি খাতায় দেখা যায় রোগীকে সেলাই ও ব্যান্ডেজ করে চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ভর্তি করা হয়। আর এই সেলাই ও ব্যান্ডেজ এর চিকিৎসা দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রঞ্জন কিশোর চাকলাদার। খাতায় তিনি এই মিথ্যা চিকিৎসা লিপিবদ্ধ করেছেন।
মধ্যনগর থানার ওসি সজীব রহমান বলেন, এ ব্যাপারে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরিফুল ইসলাম মুরাদ/এমএস












