স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব সাংবাদিকদের নিজেদেরই বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান। সাংবাদিকদের লেখালেখির স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সাংবাদিক হতে হলে বা লেখালেখিতে স্বাধীনতা রাখতে হলে, যে স্বাধীনতার কথা বারবার বলা হচ্ছে, তা রক্ষা করার দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের সাংবাদিকদের নিজেদেরই। অধিকার কেড়ে নিতে হয়, এটা মনে রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকদের একাধিক গুণ আয়ত্ত করতে হবে। সুতরাং সাংবাদিকদের স্বাধীনতা অর্জন করতে গেলে সেটা শুধু এই কমিশনের (গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন) দায়িত্ব নয়, সাংবাদিকদের নিজেদেরই ভাবতে হবে- আমার আরও একটা গুণ থাকা উচিত।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে স¤প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত স¤প্রচার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে কে কোন উদ্দেশ্যে গণমাধ্যম বাজারে আনতে চান তা খুঁজতে অনুরোধ জানিয়ে শফিক রেহমান বলেন, আপনাদের দেখতে হবে কে কোন উদ্দেশ্যে রেডিও, টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রের মালিক হচ্ছেন? সম্মেলনে দীর্ঘ বক্তব্যে শফিক রেহমান তার নিজের জীবনের নানা ব্যক্তিগত বিষয় এবং অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, যেগুলো কালাকানুন, যেগুলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে, যেগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে, সেগুলো বাতিলের দাবি করতে হবে। সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের অধিকারের সুরক্ষা যেমন চাইতে হবে, তেমনি সাংবাদিকদের রুটিরুজির সুরক্ষাও চাইতে হবে। সাংবাদিকদের জবাবদিহির ব্যবস্থাও থাকা দরকার। প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ হলে যে সমস্যা হয়, সে প্রসঙ্গে টেনে কামাল আহমেদ বলেন, আমাদের এমন কিছু ভাবতে হবে, যেটা দলীয়করণমুক্ত থাকতে পারে। গত ১৫ বছরের সাংবাদিকতার আধেয় (কনটেন্ট) বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন কামাল আহমেদ।
যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং বিজেসি পঞ্চম সম্প্রচার সম্মেলনের আহ্বায়ক ফাহিম আহমেদ বলেন, আমরা যদি এবার গণমাধ্যমের সংস্কার দেখতে পারি, আমরা যদি দলীয় লেজুড়বৃত্তির বাইরে যেতে পারি, তাহলেই কেবল বাংলাদেশের সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করার সুযোগ পাবেন। তারা হৃত মনোবল ফিরে পাবেন। আমরা শুধু সাংবাদিকতাই করতে চাই।
জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, আবু সাঈদের প্রসারিত হাতের যে মুহূর্তের সঙ্গে আরও হাজারো মুহূর্ত যা এই জুলাই আন্দোলনের মোড় পালটে দিয়েছে, দিয়েছে নতুন গতি। এই মুহূর্তগুলো আমাদের সামনে এনেছেন গণমাধ্যম কর্মীরাই। তিনি আরও বলেন, এই যে গণমাধ্যম কর্মীরা শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তারা কী চেয়েছিলেন? তারা সত্যটাই সবার সামনে আনতে চেয়েছিলেন। যার বিপরীতে তাদের গুলি গ্রহণ করতে হয়েছে, শাহাদতবরণ করতে হয়েছে। আমরা জানি বিগত সময়ে কিভাবে গণমাধ্যম কর্মীদের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। কিভাবে তাদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন করা হয়েছে। তার পরও এই গণ-অভ্যুত্থানে গণমাধ্যম কর্মীদের যে অবদান ছিল তা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ সাংবাদিক মেহেদী হাসানের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম বলেন, যে বা যারা আমার সন্তানকে এতিম করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের যেন কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, মেহেদী কী দোষ করেছিল? তাকে কেন এমন নৃশংসভাবে মারা হলো?
এর আগে প্রধান অতিথি সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ অন্য অতিথিদের নিয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ‘সংস্কার সুরক্ষা স্বাধীনতা’ এই প্রতিপাদ্যে এবারের সম্প্রচার সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক। এতে আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক খায়রুল আনোয়ার, এমআরডিআইর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান প্রমুখ।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সম্প্রচার গণমাধ্যম সাংবাদিকদের আইন অনুযায়ী যে প্রাপ্যতা রয়েছে সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সম্প্রচার সম্মেলনের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহনাজ শারমীন। দেশের ৩০টি টেলিভিশন নিয়ে করা এ প্রতিবেদনে সেখানে কর্মরত সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধার এক বিবর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
কেকে