ঢাকা ০২:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ইসলামে শীতকাল যেসব কারণে গুরুত্বপূর্ণ

ছবিঃ সংগৃহীত

গ্রীষ্মের প্রখর রোদ আর বর্ষায় ঝড় তুফানের আতঙ্ক শেষে যখন কুয়াশার মিহি চাদরে মোড়ানো শীতের আগমন ঘটে,তখন স্বাভাবিক ভাবে-ই প্রকৃতি প্রেমী মানুষের মন উৎফুল্ল হয়ে উঠে।

শীতের টাটকা সবজি, খেজুরের রস আরো বাহারি পিঠার স্বাদ কার না প্রিয়!এই ঋতুর বর্ণনা দিতে গিয়ে পবিত্র আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনে গ্রীষ্মের পাশাপাশি শীতের কথাও উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাদের (কুরাইশ বংশের লোকদের) অভ্যাস ছিল শীত ও গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ।’ (সূরা আল-কুরাইশ, আয়াত নং-০২)।

সবচেয়ে বড় কথা হলো- এই শীতের মৌসুম ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হলো, এ সময়ে ইবাদতের সুযোগ বেশি থাকে। তাই শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন প্রিয় নবীজি। (মুসনাদে আহমদ: ১১৬৫৬)

প্রিয় নবীজি শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল এমনিতে-ই আখ্যা দেননি। এর পেছেনে রয়েছে বিশেষ কারণ । হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ (বায়হাকি: ৩৯৪০)

এ সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘শীতকালকে স্বাগতম। কেননা তা বরকত বয়ে আনে। রাতগুলো দীর্ঘ হয়। ফলে তা ‘কিয়ামুল লাইলের জন্য (রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ) সহায়ক এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে সহজ।’ (আল-মাকাসিদুল হাসানা: ২৫০)

গ্রীষ্মকালে প্রখর রোদের তাপের পাশাপাশি দিন রাতের তুলনায় দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন বান্দাদের রোজা রাখতে কষ্ট হয়। অপরপক্ষে শীতকালে দিনের বেলায় সূর্যের প্রখরতাও কম থাকে এবং দিনের সময় ও হয় কম। তাই রোজা রাখার জন্য কষ্ট্ও হয় কম। তাই শীতকাল রোজাদারদের জন্য রহমত স্বরূপ।

ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, শীতকাল মুমিনদের বসন্ত। কারণ, এ সময়ে মুমিন আল্লাহর আনুগত্যের বাগানগুলোতে আনন্দ-উল্লসিত হয়। ইবাদত-বন্দেগির চারণভূমিতে বিচরণ করে। সহজ-ছোট আমলগুলোর কানন-বীথিতে পরিভ্রমণ করে। (লাতায়িফুল মাআরিফ ফিমা লিল মাওয়াসিমি মিনাল ওজায়িফ, পৃষ্ঠা-৩২৬)

আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন হওয়ার দারুণ সুযোগ শীতকাল। শীতের কষ্ট সহ্য করার কারণে এ সময়ে ইবাদতের সওয়াবও বেশি। তাছাড়া শীতার্ত মানুষের সেবা করার মাধ্যমে জান্নাত লাভের দারুণ সুযোগ লাভ হয় শীতকালে।

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন।’ (তিরমিজি: ২৪৪৯)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শীতকালে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করার ও শীতার্ত মানুষের পাশে দাড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়

কেকে

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জনপ্রিয় সংবাদ

অনলাইন স্ক্যাম ও জালিয়াতি প্রতিরোধে নতুন ফিচার আনল হোয়াটসঅ্যাপ

ইসলামে শীতকাল যেসব কারণে গুরুত্বপূর্ণ

আপডেট সময় : ০৭:৩১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্রীষ্মের প্রখর রোদ আর বর্ষায় ঝড় তুফানের আতঙ্ক শেষে যখন কুয়াশার মিহি চাদরে মোড়ানো শীতের আগমন ঘটে,তখন স্বাভাবিক ভাবে-ই প্রকৃতি প্রেমী মানুষের মন উৎফুল্ল হয়ে উঠে।

শীতের টাটকা সবজি, খেজুরের রস আরো বাহারি পিঠার স্বাদ কার না প্রিয়!এই ঋতুর বর্ণনা দিতে গিয়ে পবিত্র আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনে গ্রীষ্মের পাশাপাশি শীতের কথাও উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাদের (কুরাইশ বংশের লোকদের) অভ্যাস ছিল শীত ও গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ।’ (সূরা আল-কুরাইশ, আয়াত নং-০২)।

সবচেয়ে বড় কথা হলো- এই শীতের মৌসুম ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হলো, এ সময়ে ইবাদতের সুযোগ বেশি থাকে। তাই শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন প্রিয় নবীজি। (মুসনাদে আহমদ: ১১৬৫৬)

প্রিয় নবীজি শীতকালকে মুমিনের বসন্তকাল এমনিতে-ই আখ্যা দেননি। এর পেছেনে রয়েছে বিশেষ কারণ । হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ (বায়হাকি: ৩৯৪০)

এ সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘শীতকালকে স্বাগতম। কেননা তা বরকত বয়ে আনে। রাতগুলো দীর্ঘ হয়। ফলে তা ‘কিয়ামুল লাইলের জন্য (রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ) সহায়ক এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে সহজ।’ (আল-মাকাসিদুল হাসানা: ২৫০)

গ্রীষ্মকালে প্রখর রোদের তাপের পাশাপাশি দিন রাতের তুলনায় দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন বান্দাদের রোজা রাখতে কষ্ট হয়। অপরপক্ষে শীতকালে দিনের বেলায় সূর্যের প্রখরতাও কম থাকে এবং দিনের সময় ও হয় কম। তাই রোজা রাখার জন্য কষ্ট্ও হয় কম। তাই শীতকাল রোজাদারদের জন্য রহমত স্বরূপ।

ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, শীতকাল মুমিনদের বসন্ত। কারণ, এ সময়ে মুমিন আল্লাহর আনুগত্যের বাগানগুলোতে আনন্দ-উল্লসিত হয়। ইবাদত-বন্দেগির চারণভূমিতে বিচরণ করে। সহজ-ছোট আমলগুলোর কানন-বীথিতে পরিভ্রমণ করে। (লাতায়িফুল মাআরিফ ফিমা লিল মাওয়াসিমি মিনাল ওজায়িফ, পৃষ্ঠা-৩২৬)

আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন হওয়ার দারুণ সুযোগ শীতকাল। শীতের কষ্ট সহ্য করার কারণে এ সময়ে ইবাদতের সওয়াবও বেশি। তাছাড়া শীতার্ত মানুষের সেবা করার মাধ্যমে জান্নাত লাভের দারুণ সুযোগ লাভ হয় শীতকালে।

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিয়ে দেবেন।’ (তিরমিজি: ২৪৪৯)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শীতকালে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি করার ও শীতার্ত মানুষের পাশে দাড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়

কেকে