কসম! আমরা প্রায় বিভিন্ন বিষয়ে অনেককে কসম করতে দেখি। ইসলামের দৃষ্টিতে কসম করা জায়েজ। তবে তা যেন অপ্রয়োজনে না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। অপ্রয়োজনে বা কথায় কথায় কসম করা মাকরুহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে অধিক শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।’ (সুরা: কলম, আয়াত ১০)
ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহ তায়ালার নাম ব্যতীত অন্য কোনো জিনিসের কসম করা নাজায়েজ। এমনকি কোরআনের কসম করাও জায়েজ নয়, আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টির মধ্য থেকে যার নামে ইচ্ছা কসম করতে পারেন। কিন্তু সৃষ্টির জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম করা জায়েজ নেই। তা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মুখেই নির্বিবাদে গায়রুল্লাহর নামে কসম উচ্চারিত হয়। কসম মূলত এক প্রকার সম্মান, যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ পাওয়ার যোগ্য নয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের পিতৃপুরুষের নামে শপথ করতে নিষেধ করেছেন। কারো যদি শপথ করতেই হয়, তবে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৩৪০৭)।
অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে কসম করল, সে শিরক করল।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত, হাদিস ৩৪১৯)।
তবে কেউ কোনো ফলমূল বা খাবার না খাওয়ার কসম করলে তা পূরণ করা আবশ্যক। কেউ যদি কমস করে আমি এই জিনিসটি খাব না। তাহলে তার জন্য কসমের কারণে তা না খাওয়া আবশ্যক। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فِي الْحَرَامِ: يَمِينٌ يُكَفِّرُهَا
তিনি বলেন, হালাল কিছুকে নিজের ওপর হারাম করা কসমের অন্তর্ভুক্ত। এরপর সেই কাজ করলে কাফফারা দিতে হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৭৩)
তাই এমন কথা বলার কারণে যা না খাওয়ার কসম করা হয়েছে তা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু কসম করার পরেও যদি কেউ কসমকৃত বস্তু খেয়ে ফেলে তাহলে তার জন্য একটি কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হবে।
এজন্য কসমকারী নিজের পরিবারকে নিয়ে মধ্যম ধরনের যে খাবার গ্রহণ করে থাকেন, ১০ জন মিসকিনকে দুই বেলা সে রকম খাবার খাওয়াবে। অথবা দুই জোড়া কাপড় দেবে।
স্বাভাবিকভাবে, সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকাকে একদিনের খরচ ধরা হবে। সেই হিসেবে সদকায়ে ফিতর পরিমাণকে দশ দিয়ে গুণ দিলে যত টাকা হয়,তাই হবে কসমের কাফফারা। যেমন কোনো রমজানে সদকায়ে ফিতির সর্বনিম্ন ৭০ টাকা থাকলে সেই হিসেবে ৭০০ টাকা হবে কসমের কাফফারা। লক্ষণীয যে, এটি পরিবর্তিত হতে পারে।
যদি টাকা দিয়ে কাফফারা আদায় করতে সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তিনটি রোজা রাখার মাধ্যমে কাফফারা আদায় করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৮৪৯৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯২)
কেকে