ঘূর্ণিঝড় দানা’র প্রভাব কেটে যাওয়ার পর ভাটার টানে নেমে গেছে নদের পানি। মোংলা শহর এবং এর আশপাশের ইউনিয়ন গুলোয় আজ শুক্রবার সকাল থেকে আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল। মাঝেমধ্যে মেঘ দেখা গেলেও আবহাওয়া স্বাভাবিক। ঘূর্ণিঝড় দানা’র প্রভাব অনেকটা কাটলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
মোংলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের মতো প্রবাহিত হচ্ছে। মোংলা পশুর নদীতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে। শহরের নিম্নাঞ্চল বাদে অন্য অঞ্চলে তেমন পানি জমে নেই। মানুষের জনজীবন এবং যান চলাচল একেবারে স্বাভাবিক। তবে দানা’র প্রভাব কাটলেও মোংলা উপকূলের মানুষের বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্ক এখনো কাটেনি। মোংলা মামার ঘাট এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন এখন চরমে । অর্ধেকেরও বেশির ভাগ রাস্তা চলে গেছে নদীর গর্ভে ।
এ বিষয়ে মোংলা উপজেলার দক্ষিণ সিগন্যাল টাওয়ারের চর এলাকার মোঃ মনির হোসেন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আইলা আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছিল। এর পর থেকে ঝড়ের কথা শুনলেই আমাদের পরান কাঁপে। আমাদের এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মোংলা পশুর নদী। যেকোনো জলোচ্ছ্বাসে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। তাই ঝড়ের কথা শুনে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবু এখন যে উঁচু জোয়ার হচ্ছে, তাতে ভয় আমাদের কাটেনি।
এ বিষয়ে মোংলার মিঠাখালী ইউনিয়নের অচিন্ত চৌধুরী নামের এক মৎস্য চাষি বলেন, গত ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নদী ও খালে জোয়ারের পানি তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছিল। জোয়ারের পানির চাপ এতটাই প্রবল ছিল যে মুহূর্তের মধ্যেই আমার ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। রাত থেকে আমার ঘের’সহ এখানকার প্রায় অর্ধশত মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছিলো তাই এইবারও আমরা অনেক চিন্তার মধ্যে ছিলাম সৃষ্টিকর্তা ও মা বাবার কৃপায় এবার আমরা এই ঘূর্ণিঝড় দানার হাত থেকে রেহায় পেয়েছি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য মোংলার সকল সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত ছিলো বলে জানিয়েছেন মোংলা উপজেলা প্রশাসন। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গত বুধবার রাত থেকে গত বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কখনো থেমে থেমে কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি অনেকটা কমে এলেও বৃহস্পতিবার রাতে আবার কয়েক দফায় বৃষ্টি হয়।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে রোদ ওঠায় মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে।
বড় কোনো ক্ষতি ছাড়াই ঘূর্ণিঝড় দানা উপকূল পাড়ি দেওয়ায় মোংলার প্রতিটা এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। গত দুই দিন আতঙ্কে ছিল এ অঞ্চলের লাখো মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের তুলনায় আজ শুক্রবার ভোরে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়নি। এতে স্বস্তিতে আছেন মোংলা পশুর নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে স্থানীয় নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। ঘূর্ণিঝড় দানা ভারতের ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে অতিক্রম করেছে। আপাতত শঙ্কামুক্ত বলা যায়।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানা ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করছে। খুলনা অঞ্চলে দানার প্রভাব অনেকটা কেটেছে। তবে দুপুরে দানা’র প্রভাবের শেষ ধাক্কা হিসেবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত খুলনায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।#
মোঃ আবু বকর সিদ্দিক